ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
অন্তর্বর্তী সরকারও গুরুত্ব দিচ্ছে সর্বজনীন পেনশনকে
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:০ পিএম
ছবি: সংগ্রহ
বিদায়ি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গৃহীত সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে শুরু থেকেই নানারকম আলোচনা-সমালোচনা ছিল। তাই গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল এই স্কিম কি চলমান থাকবে, না নতুন সরকার এই স্কিমের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছেÑঅন্তর্বর্তী সরকারও সর্বজনীন পেনশনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের অর্থ-বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিজেই এর প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তার আলোকেই আজ পেনশন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বডির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল রোববার বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে গুরুত্ব দিচ্ছে। গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই সোমবার গভর্নিং বডির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এই সরকারের আমলেই। বিশেষ করে বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিজেই এই পেনশন স্কিমের প্রতি খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কীভাবে নতুন আঙ্গিকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেসব বিষয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। এ ছাড়া পেনশন স্কিমের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে গভর্নিং বডিকে জানানো হবে। আমরা কতদূর এগোতে পেরেছি, কী কী বিধিমালা করা হয়েছেÑএসব বিষয়ে জানানো হবে। পাশাপাশি তাদের কোনো পরামর্শ থাকলেও তারা দেবেন। সব মিলে গভর্নিং বডির প্রথম বৈঠকের পর এই স্কিমে যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল, তা কেটে যাবে বলে আমি মনে করি।’
এদিকে একসময় প্রতিদিন যেখানে ৪-৫ হাজার মানুষ অ্যানরলমেন্ট বা নিবন্ধন করতেন, এখন এক বছরের ব্যবধানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪-৫ জনে। এমনকি কোনো কোনো দিন একজন গ্রাহকও এই স্কিমের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন না। যারা প্রতি মাসে কিস্তি দিতেন, আগ্রহ হারিয়ে তারাও কিস্তির টাকা জমা দিচ্ছেন না। আর এদের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। চাঁদা না দেওয়ার হার অনেক বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত ‘প্রত্যয়’ স্কিমটি ব্যাপক সমালোচনা ও আন্দোলনের মুখে গত আগস্ট মাসে সার্কুলার জারি করে প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। ফলে পুরো স্কিম এখন বেসরকারি খাতনির্ভর হয়ে পড়েছে। এর কারণে স্কিমের সফলতাও এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অনেকে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে স্কিমটি চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ এই স্কিমটি চালানোর জন্য সরকারকে প্রতি মাসে একটা মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
এই স্কিমের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা জানান, এখনও পর্যন্ত পেনশন স্কিমে মোট নিবন্ধনধারী সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭১ জন। এদের কাছ থেকে চাঁদা হিসেবে পাওয়া গেছে ১৩০ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর মধ্য থেকে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
তথ্য মতে, চারটি স্কিমের মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত সমতায় সবচেয়ে বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এর সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। এরপর সুরক্ষা স্কিমের নিবন্ধনের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১২৫ জন, প্রগতিতে ২২ হাজার ৩৩২ জন এবং বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত প্রবাসে মাত্র ৮৯৪ জন নিবন্ধন করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট তৎকালীন সরকার এই স্কিমটি চালু করে। সমতা, সুরক্ষা, প্রগতি ও প্রবাস-এই চারটি স্কিমের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নতুন করে যুক্ত করা হয় ‘প্রত্যয় স্কিম’। এই স্কিমে শুধু সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি ২০২৪ সালে ১ জুলাই তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে গত আগস্টে পুরো প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে দেওয়া হয়।
গত ২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে বলা হয়, এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় স্কিমসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।