ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৮:৫৫:৫৩ এএম

অবৈধ পথে আসছে মসলা

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৯:০ পিএম

অবৈধ পথে আসছে মসলা

ছবি: সংগ্রহ

দেশে মসলার চাহিদা পূরণে বৈধ পথে আমদানির পাশাপাশি একটি বড় অংশ চোরাই পথে আসছে। এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। মসলা ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে এসব মসলার উৎপাদন না থাকায় আমদানির মাধ্যমেই চাহিদা পূরণ করতে হয়। অতীতে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় মসলার ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে এসব মসলার ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) প্রথমবার অবৈধ পথে মসলা আমদানির বিষয়টি তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।



বিটিটিসি জানিয়েছে, দেশে মসলা ও শুকনো ফলের নয়টি পণ্যের বার্ষিক চাহিদা ১ লাখ ২৪ হাজার টন, তবে বৈধ পথে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৮ হাজার টন। চাহিদার ঘাটতি ৫৬ হাজার টন, যা মূলত অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করেছে। অনুমান করা হচ্ছে, অবৈধভাবে দেশে আসা এ নয়টি পণ্যের খুচরা বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা।

 

বিশেষত জিরার চাহিদা বছরে ৬০ হাজার টন হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈধ পথে আমদানি হয়েছে ৩৪ হাজার টন। দেশে জিরার উৎপাদন না থাকলেও ঘাটতি দেখা যায়নি, যা নির্দেশ করে যে বাকি পরিমাণ অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা এলাচ, দারুচিনি ও লবঙ্গের ক্ষেত্রেও। বিটিটিসি মনে করে, এসব পণ্যের আমদানিতে চোরাচালান বা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।

 

জানা গেছে, স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্যের ক্ষেত্রে নিয়মিত ওজনে কারচুপি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বুড়িমারী, হিলি, ভোমরা ও বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা ৭৮টি চালানে ওজনে কারচুপির ঘটনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে কিশমিশ ও কাজুবাদামের চালান ছিল ১৮টি। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

 

বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ শুল্ক হার চোরাচালানকে উৎসাহিত করছে এবং এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্যারিফ কমিশন চারটি মসলা (জিরা, এলাচ, দারুচিনি ও লবঙ্গ) এবং কিশমিশ ও আলুবোখারার ক্ষেত্রে শুল্কহার ২৭ শতাংশ এবং কাজুবাদাম ও কাঠবাদামের শুল্কহার প্রায় ৪৬ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে।

 

এনবিআর জানিয়েছে, গত অর্থবছরে মসলা ও অন্যান্য পণ্যে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। তবে ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী শুল্কহার যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ ও অবৈধ চোরাচালান বন্ধ করা গেলে রাজস্ব আয় বেড়ে ১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা হতে পারে।

 

এদিকে সঠিকভাবে মসলা আমদানির জন্য ৮ দফা সুপারিশ করেছে বিটিটিসি। সেগুলো হলো- শুল্কহার কমিয়ে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা, আমদানির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ, সীমান্তবর্তী এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল বৃদ্ধি, সব স্থলবন্দরে ওজন নির্ধারণে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু, সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা, চোরাচালান রোধে গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম জোরদার ও সমন্বয় বৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে চোরাচালান প্রতিরোধ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা ও প্রয়োজনে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান।

অবৈধ পথে আসছে মসলা