ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:১৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ
অর্থনীতিতে কিছুটা শৃঙ্খলা অস্বস্তি রাজনীতিতে
স্বৈরাচার পতনের তিন মাস
৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:১৬ এএম
![অর্থনীতিতে কিছুটা শৃঙ্খলা অস্বস্তি রাজনীতিতে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/05/20241105091603_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহীত
শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসানে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছিল, এবং আজ তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে। এই সময়ে, গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে উদার, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করেছে। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারও তিন মাস পূর্ণ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে খানিকটা শৃঙ্খলা ফিরেছে, যদিও ভঙ্গুর অবস্থা এখনও বিদ্যমান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া এবং কিছু সংস্কার কার্যক্রমের ধীর গতির কারণে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, নতুন সরকারকে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে কাজ শুরু করতে হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ রয়েছে। এই বিশাল ঋণ পরিশোধের চাপ এখন বর্তমান সরকারের উপর।
শেখ হাসিনার শাসন অবসানের পর, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের তথ্য উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া, পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে সরকারের উন্নয়নের নামে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ৪০ শতাংশই লুটপাট হয়েছে।
অর্থনৈতিক খাতের বিশৃঙ্খলা ছাড়াও, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ও আন্দোলন, পুলিশ প্রশাসনের পুনর্বহালসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। রাষ্ট্র সংস্কারের যে আশা নিয়ে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তা কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলেও, এখনো পাঁচটি কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। নির্বাচন হতে যত দেরি হবে, ততই দেশের পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
এছাড়া, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যের পর, ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হলেও, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভিন্ন মতামত দেখা গেছে। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের অবস্থানও সমর্থন পায়নি। বিএনপি জানিয়েছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। এসব ঘটনায় সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ও সমালোচনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
শিক্ষাঙ্গন এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এবং গত মাসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যেমন ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করা ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ না দেওয়া এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়া। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিতর্কের অবসান ঘটেছে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, সরকার নির্বাচনের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিন মাসে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সক্রিয়তা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনগণের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
অর্থনৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে, ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে, এবং রেমিট্যান্সের প্রবাহ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, যা আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী জানান, সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও, মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজার ব্যবস্থাপনায় আরো নজর দেওয়া প্রয়োজন। অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতন জনগণের জন্য মুক্তির বার্তা হলেও, নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার সংস্কার শুরু করলেও, নির্বাচনের ব্যাপারে অনির্বাচিত সরকারের কাজ কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা সরকারকে দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন, তবে সরকারের কাজের গতি ও সমন্বয় নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন। সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, সরকারের এখনও পরিষ্কার রোডম্যাপ নেই এবং নির্বাচন সংস্কার নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি।
শেষমেষ, সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। তবে, এর জন্য সরকারকে ত্বরিত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
![অর্থনীতিতে কিছুটা শৃঙ্খলা অস্বস্তি রাজনীতিতে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)