ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
অর্থনীতি সামাল দিতে জ্বালানি খাত পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ সিরিয়ায়
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:০ পিএম
![অর্থনীতি সামাল দিতে জ্বালানি খাত পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ সিরিয়ায়](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/18/20241218124523_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বাশার আল-আসাদের দুই যুগের শাসনামলের বড় একটি সময় জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল সিরিয়ার অর্থনীতি। ২০১০ সালে যখন সমগ্র অঞ্চলে আরব বসন্তের হাওয়া লাগে, তখন দেশটির জিডিপির পাঁচ ভাগের এক ভাগ ছিল জ্বালানি তেলনির্ভর। তখন দেশটির রফতানির অর্ধেক ছিল এ জীবাশ্ম সম্পদ। এমনকি জ্বালানি তেল থেকে হতো রাষ্ট্রীয় আয়ের অর্ধেকের বেশি সংস্থান।
পরবর্তী সময়ে বছরের পর বছর যুদ্ধ খাতটিকে ধ্বংস করে দেয়। এখন আসাদের মস্কো পালিয়ে যাওয়ার পর নতুন সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য অনেকটা নির্ভর করছে খাতটির পুনরুজ্জীবনের ওপর। তবে এর ওপর প্রভাব ফেলবে আন্তর্জাতিক সহায়তা, ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল সরকার ব্যবস্থা।
সম্প্রতি দ্য ন্যাশনালে সিরিয়ার জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেছেন পরামর্শক সংস্থা কামার এনার্জির প্রধান নির্বাহী রবিন এম মাইলস।
একসময় সিরিয়ার খনি শিল্পে বিদেশী কোম্পানির উপস্থিতি ছিল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী ও উচ্চ সালফারযুক্ত জ্বালানি তেল উত্তোলন করত সিরিয়ান পেট্রোলিয়াম কোম্পানি (এসপিসি)। কিছু এলাকা ছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক গালফস্যান্ডস পেট্রোলিয়ামের অধীনে। দেইর এজজর এলাকায় উচ্চমানের জ্বালানি তেল উত্তোলন করত শেল ও টোটাল এনার্জিস। এ তেলক্ষেত্রগুলো পরে ইএসআইএস দখল করে নেয় এবং ২০১৫ সালে মার্কিন বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মূলত সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি সরবরাহ করত গ্যাস ক্ষেত্রগুলো। দেশটির গ্যাস উত্তোলন ব্যবস্থা জ্বালানি তেলের তুলনায় অনেকটা ভালো ছিল। তবে ২০১০ সালের ৮৪০ কোটি ঘনমিটার থেকে গত বছর তা নেমে আসে ৩০০ কোটি ঘনমিটারে।
২০১৪ সাল থেকে সহজ ঋণ শর্তে সিরিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৫০-৮০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল সরবরাহ করত ইরান। তবে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সে প্রবাহ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। শিগগিরই দেশটিতে শীত তীব্র হবে, কিন্তু জ্বালানি মজুদ রয়েছে এক মাসের।
এরই মধ্যে নতুন সরকার এসপিসিকে পুনরায় জ্বালানি তেল উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে উত্তোলনই শেষ কথা নয়। কারণ নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তিতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার স্থগিতাদেশ। এক্ষেত্রে কাতার ও তুরস্কের মতো মিত্র দেশ অর্থ দিতে পারে অথবা ছাড় বা লেট পেমেন্টে জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে।
২০২০ সালে আরোপিত মার্কিন সিজার আইন আগামী শুক্রবার মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। তবে এটি নবায়ন হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সরানো একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এতে অনেক বছর সময় লাগে, যা ইরাক ও লিবিয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
বাসিল আবদুল আজিজ সম্প্রতি সিরিয়ার নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। জ্বালানি প্রকৌশল বিষয়ে তার ডিগ্রি রয়েছে। সম্ভবত তার ওপর জ্বালানি সরবরাহ ঠিক রাখার দায়িত্ব পড়বে। এখন সিরিয়ার অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হবে গ্যাস উত্তোলন পুনরুজ্জীবন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আরো উন্নত করা। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল উত্তোলন বৃদ্ধি ও পরিশোধনাগারগুলো পুনরায় চালু করতে হবে। কারণ এর ওপর স্থানীয় জ্বালানি চাহিদা ও সরকারের আয় নির্ভরশীল।
জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসের পাশাপাশি পরিবহন কেন্দ্র হিসেবেও সম্ভাবনাময় দেশ সিরিয়া। দেশটি হয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পাইপলাইনটি পুনরায় চালু করা হলে ইরাকের জন্য বিকল্প রফতানি পথ তৈরি হতে পারে। ইসরায়েলের কারণে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হলেও সিরিয়া হয়ে মিসরীয় গ্যাস লেবাননে সরবরাহের পরিকল্পনাটি এখনো অসম্ভব নয় বলা হচ্ছে বিশ্লেষণে।
![অর্থনীতি সামাল দিতে জ্বালানি খাত পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ সিরিয়ায়](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)