ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৪১:৫১ এএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:২১ এএম

অনলাইন সংস্করণ

আদানির গ্রেফতার চায় যুক্তরাষ্ট্র

২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:২১ এএম

আদানির গ্রেফতার চায় যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগ্রহ

নরেন্দ্র মোদির টাকার কুমির গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ডলার ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা সাজানোর এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য তা গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আদানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগটি করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

 

নিউ ইয়র্কের প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি আদানি ও তার অন্য শীর্ষ নির্বাহীরা তার নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানির জন্য কাজ পেতে চুক্তির জন্য রাজি করাতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিল। রয়টার্স জানিয়েছে, চুক্তিটি করা গেলে আদানির কোম্পানি ভারতের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ পেত, যা থেকে ২০ বছরে তাদের ২০০ কোটি ডলার লাভ হতো। আর আদানিসহ আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে তার ভাতিজা সাগর আদানিও রয়েছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আদানি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া পায়নি বিবিসি।

 

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাই-প্রোফাইল কোম্পানি আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যদিও আদানি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, তবে সে সময় তার কোম্পানির শেয়ারদরে ব্যাপক পতন হওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা গোপনেই চলছিল আদানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম।

 

আদানির বিরুদ্ধে এই ঘুষ কেলেঙ্কারির তদন্তের খবর কয়েক মাস ধরেই ঘুরছিল। প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। তারা অভিযোগ করেন, নির্বাহীরা কোম্পানির ঘুষবিরোধী নীতিমালা এবং তদন্ত-সংক্রান্ত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দিয়ে মার্কিন সংস্থাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ ও বন্ড সংগ্রহ করেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস এক বিবৃতিতে আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘোষণা করে বলেন, অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তরা ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে শতকোটি ডলারের চুক্তি পেতে পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন এবং এই ঘুষ কেলেঙ্কারির তথ্য গোপন রেখে মার্কিন ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করেছিলেন।

 

গৌতম আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি অনৈতিক ব্যবসায়িক সুবিধা পেয়ে আসছেন বলে দেশটির বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে। অবশ্য আদানি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাটর্নি পদে নিয়োগগুলো সাধারণত প্রেসিডেন্ট দিয়ে থাকেন। আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগটি এমন সময়ে উঠল যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির বিচার বিভাগে ব্যাপক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন আদানি। একইসঙ্গে ট্রাম্পের পরবর্তী আমলে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

 

এদিকে এই ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলার পর ভারতীয় শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে আদানি গ্রুপের। বুধবার অভিযোগ দাখিল করার পর আদানি গ্রুপের বিভিন্ন শেয়ারের ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়। বিশেষ করে আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি পাওয়ারের শেয়ারগুলো বড় ধরনের পতনের মুখোমুখি হয়। এ ঘটনায় একদিনে আদানি গ্রুপ ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের বাজার মূলধন হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা হারানো ও আইনি ঝুঁকিকে পতনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আদানি গ্রুপের ডলার বন্ডের দামও রেকর্ড ১৫ সেন্ট পর্যন্ত কমেছে।

 

বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংকট আদানি গ্রুপের বৈশ্বিক অবস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মামলা সম্পর্কে কোম্পানির পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আদানির গ্রেফতার চায় যুক্তরাষ্ট্র