ঢাকা শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫ - ৮:৫০:৫৩ এএম

আবারো বন্ধ থাকছে রেমিট্যান্স আমদানি-রফতানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড

ব্যাংক বন্ধ টানা তিনদিন

৫ আগস্ট, ২০২৪ | ১০:৭ এএম

আবারো বন্ধ থাকছে রেমিট্যান্স আমদানি-রফতানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড

ছবি: সংগ্রহ

দেশে চলমান সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যে আবারো টানা তিনদিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে ব্যাংক। আজ সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি, রফতানিসহ প্রায় সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।


ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, ব্যাংক বন্ধ থাকলে অভ্যন্তরীণ লেনদেনের পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যের সব কার্যক্রমও বন্ধ থাকে। এ তিনদিন দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। আমদানি ও রফতানির ঋণপত্রও (এলসি) খোলা সম্ভব হবে না। এর প্রভাবে দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক সংকট আরো বেশি ভঙ্গুর হবে।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতা ও কারফিউ জারির প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই থেকে টানা পাঁচদিন দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একই সময় ইন্টারনেট সেবাও পুরোপুরি বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল বাংলাদেশ। ওই সময় দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি ও রফতানি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল সরকারের রাজস্ব ও শুল্ক আদায় প্রক্রিয়াও।

ব্যাংক বন্ধের পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশে অর্থ লেনদেনের স্বীকৃত মাধ্যমগুলোর মধ্যে কেবল এটিএম বুথ সচল ছিল। যদিও ওই সময় দেশের বেশির ভাগ এটিএম বুথই টাকার সংকটে বন্ধ হয়ে যায়। বুথে নগদ টাকার সংকট এখনো চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার এটিএম বুথে গতকালও চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গতকাল থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘাত, সংঘর্ষ ও প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। সহিংসতার কারণে গতকাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেও দেশের ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগ শাখা বন্ধ ছিল।

রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, রোববার ৪ আগস্ট সকালের দিকে মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পুরান ঢাকা, উত্তরা, মিরপুর এলাকার কিছু শাখা খোলা হলেও সহিংসতা শুরু হলে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। সারা দেশেও ব্যাংকিং কার্যক্রম খুবই সীমিত পরিসরে চলেছে বলে ব্যাংক নির্বাহীরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শুক্র ও শনিবার যোগ করলে এবার টানা ছয়দিন ব্যাংক বন্ধের ফাঁদে পড়ল।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সুশাসনের ঘাটতি, সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক আগেই দেশের অর্থনীতি জাহান্নামে পতিত ছিল। এখন সেটি আরো বড় দুর্যোগের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো গণ-আন্দোলন হয়েছে, তার সবগুলোই আমি কাছ থেকে দেখেছি। সরকার পতনের এক দফার যে আন্দোলন এখন চলছে, সেটি কখনো ব্যর্থ হবে না। কারণ এ ধরনের গণ-আন্দোলন ব্যর্থ হয় না।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গণ-আন্দোলনের মুখে সরকারের পরিবর্তন অর্থনীতির জন্য মঙ্গলের বার্তাও নিয়ে আসতে পারে। দেখতে হবে পরবর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক কারা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্ভব হলে অর্থনীতির চলমান ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না।’

দেশে সংঘটিত সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ, আমেরিকার কয়েক দেশে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কোনো কোনো সমাবেশ থেকে রেমিট্যান্স ‘শাটডাউনের’ ঘোষণাও আসে।

প্রবাসীদের ঘোষণার প্রভাব জুলাইয়ের রেমিট্যান্স প্রবাহে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দেশে গত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। রেমিট্যান্সে বড় পতনের ধাক্কা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর পড়েছে। জুলাইয়ে রিজার্ভ প্রায় ১৩০ কোটি বা ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুসারে গত ৩০ জুন দেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ৩১ জুলাই এসে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তবে ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের আগস্টে। এর পর থেকেই রিজার্ভে ধারাবাহিক ক্ষয় চলছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গত ৩ আগস্ট আয়োজিত সমাবেশ থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণায় বলা হয়, ‘সরকার পতনের এক দফা দাবি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট খোলা থাকবে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে না পাঠানোরও আহ্বান জানানো হয়।’ শিক্ষার্থীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। একই সঙ্গে সোম, মঙ্গল ও বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।

 

আবারো বন্ধ থাকছে রেমিট্যান্স আমদানি-রফতানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড