ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৫২:৫৭ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ৪:১৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা ও জিএসপি নীতির সংশোধন চায় বাংলাদেশ

৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ৪:১৯ পিএম

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা ও জিএসপি নীতির সংশোধন চায় বাংলাদেশ

ছবি: সংগ্রহীত

বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছে: একদিকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতা এবং অন্যদিকে ব্যবসার ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা নীতির সংশোধন।

 

 

বাংলাদেশ ও ইইউ-এর যৌথ কমিশনের সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ পরেও বাংলাদেশ যেন ইউরোপীয় বাজারে জিএসপি সুবিধা পায়, সেই বিষয়টিও বৈঠকে গুরুত্ব পায়। পাশাপাশি, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বহুপাক্ষিক উদ্যোগের ওপরও আলোচনা হয়েছে।

 

 

৪ নভেম্বর, সোমবার, ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সভাকক্ষে দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের ১১তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং ইইউ থেকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।

 

 

বৈঠকে, ইইউ-এর *ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম* নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, যেখানে ইইউ আরও দক্ষ শ্রমিক নিতে আগ্রহী। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ প্রায় ১০টি খাতে বাংলাদেশ থেকে জনবল নিতে চাচ্ছে। এজন্য সরকার একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে, যা দু’পক্ষের সম্মতিতে প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে, জার্মানি, ইতালি, গ্রিস ও রোমানিয়া বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যৌথ কমিশন সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব খাতগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো- আইসিটি, কেয়ারগিভিং, নির্মাণশিল্প, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, কৃষি, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত, জাহাজ নির্মাণ এবং তৈরি পোশাক শিল্প।

 

 

২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ইইউ তাদের *ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম* ঘোষণা করেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে দক্ষ শ্রমিক সরবরাহের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বৈধভাবে ইউরোপে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ বাড়বে।

 

 

এদিকে, জিএসপি নীতি সংশোধন নিয়ে বাংলাদেশ ইইউ প্রতিনিধিদের কাছে কিছু দাবী উত্থাপন করেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশি পণ্য যেন আরও সহজে ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারে, তার জন্য জিএসপির কিছু শর্ত সংশোধন করার অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আশাবাদী যে, নতুন ইইউ জিএসপি স্কিমের আওতায় বাংলাদেশি তৈরি পোশাকসহ সব পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ইউরোপে রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।

 

 

এছাড়া, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের পোশাক খাত যাতে ইউরোপীয় বাজারে শাস্তি না পায়, সেটিও আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ইউরোপে শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানি করা যায়, কিন্তু এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশ যদি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়, তবে ২০২৪ সালের পরও ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তবে, জিএসপি সুবিধা হারালে ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, যা বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হবে।

 

 

এ সময়, ইইউ প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য একটি অতিরিক্ত তিন বছরের ট্রানজিশন পিরিয়ড প্রদান করবে, যার মাধ্যমে ২০২৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একই সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তবে, বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা দীর্ঘমেয়াদী করতে হলে সুশাসন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করতে হবে।

 

 

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন থমকে যাওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার পেছনে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ পরিশোধ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।

সভায় বাংলাদেশ ও ইইউ উভয়পক্ষই বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যে একমত হয়েছে। পাশাপাশি, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার নিয়ে ভবিষ্যতে আরো উন্নত এবং শর্তাধীন বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন মেনে চলার অঙ্গীকার করা হয়েছে। ইইউ এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে, যার মাধ্যমে শ্রম অধিকার এবং মানবাধিকারের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো আরও শক্তিশালী হবে।

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা ও জিএসপি নীতির সংশোধন চায় বাংলাদেশ