ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩ মে, ২০২৪ | ১২:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
৩ মে, ২০২৪ | ১২:১২ পিএম
![ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/05/03/20240503120717_original_webp.webp)
লক্কড়-ঝক্কড় ও রঙচটা বাস ঢাকা মহানগরীর সৌন্দর্যকে নষ্ট করছে। তাই আগামী ৩১ মে’র মধ্যে বাসগুলোকে মানসম্মত অবস্থায় এনে, রঙ দিয়ে ও ফিটনেট ঠিক করে মহানগরীতে চালানোর জন্য বাস মালিকদের আবার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর আগে ঈদের পরই রঙচটা বাস চলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিলো সংস্থাটি। এদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘কসমেটিক সার্জারি’ করে গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা দূর করা সম্ভব নয়। এর জন্য পুরো ব্যবস্থাপনাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) বিভিন্ন গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিআরটিএ। বিজ্ঞপিতে বলা হয়, লক্কড়-ঝক্কড় ও রঙচটা বাস ঢাকা মহানগরীর সৌন্দর্যকে দিন দিন স্নান করছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ, রঙচটা, জরাজীর্ণ, বিবর্ণ মোটরযান সড়কে চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে এ ধরনের বাসগুলোকে মানসম্মত রঙ দিয়ে ও ফিট করে মহানগরীতে চালানোর জন্য আবার অনুরোধ করা হলো।
এর আগে গত ২ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে ‘ফিটনেসবিহীন, বায়ু দূষণকারী ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধকরণ সংক্রান্ত সভা’য় বাস মালিকদের উপস্থিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঈদের (১১ এপ্রিল) পর ঢাকার সড়কে কোনও রঙচটা বাস চলাচল করতে পারবে না। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ওই সভার সভাপতিত্ব করেন।
তবে ঈদ যাওয়ার পরেও রাজধানীতে এখনও রঙচটা বাস অবাধে চলাচল করছে। বাস মালিকরা বলছেন, বাস নতুন রঙ করে রাস্তায় নামানোটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আপাতত যেসব বাসের অবস্থা বেশি খারাপ সেগুলো রঙ দিয়ে ও মেরামত করে আগে নামানো হবে। বাকিগুলোও ধাপে ধাপে রঙ করা হবে।
শিকড় পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাজাহান বলেন, একবারে সবগুলো বাস বসিয়ে রেখে রঙ করলে গণপরিবহনের সংকট তৈরি হবে। আমরা দুই মাস সময় চেয়েছি। পর্যায়ক্রমে বাস সার্ভিস করে রাস্তায় নামাচ্ছি। প্রথম ধাপে আমাদের ৬৮টি বাসের মধ্যে ১৮টি বাসের কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে ১৭টি প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো সড়কে নামার পর আরও ১০টি বাস সার্ভিসিংয়ে নেবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিহঙ্গ পরিবহনের এক মালিক বলেন, কোম্পানির চাওয়া কী সেটা জানি না। তবে আমরা সাধারণ বাস মালিকরা চাই এমন ব্যবস্থাপনা চালু হোক যেখানে কোনও চাঁদাবাজি থাকবে না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব চলছে। আর বাসগুলোর যন্ত্রাংশের দামের ক্ষেত্রে যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে তা ভাঙতে হবে। তাহলে সব খরচ দিয়ে আমাদেরও কিছু থাকবে।
এদিকে রঙ কতদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না বাস চালকরা। জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, সব বাস চালক একক মালিকের গাড়ি চালান না। একেক সময় একেক বাসও চালাতে হয়। এতে হাত বদলে কারণে বাসগুলো আগের চালক কীভাবে রেখে যান তার নিশ্চয়তা নেই। সেই বাস অন্য চালক পেলে তারাও বাসের ফিটনেসের প্রতি গুরুত্ব দেন না। বাস চালিয়ে দৈনিক জমা টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বাকিটা বাসায় নিয়ে যেতে হবে।
প্রতিযোগিতাহীন সুষ্ঠুভাবে বাস চালিয়ে দৈনিক জমা ওঠানো সম্ভব না জানিয়ে চালকরা বলেন, ‘একজন প্রতিযোগিতা না করলে আরেকজন করবে। সে অধিক যাত্রী ওঠাবে। যারা ভালোমত গাড়ি চালাবে তারা ওই যাত্রীগুলো পাবে না, এতে জমার টাকাও উঠবে না। আর জমা না উঠাতে পারলে বাস মালিকের সঙ্গে মন কষাকষি হয়, নিজেরও কিছু থাকে না।’
সমাধান কী জানতে চাইলে পরিস্থান বাসের চালক শরিফ বলেন, ‘একটা সিস্টেম থাকা উচিত। পরিবহন সেক্টরে কোনও সিস্টেম নাই। আমাদের চাকরিরও কোনও সিস্টেম নাই, রাস্তায়ও সিস্টেম নাই। যারা সিস্টেম ঠিক করবো তারা না ভাবলে আমরা কী করুম? আমরাও তো সিস্টেমের অংশ।’
তবে কেবল রঙ করে গণপরিবহন ব্যবস্থার সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে না। এর জন্য বিজ্ঞানসম্মত সড়ক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। না হলে খণ্ডকালীন রঙ করাটা অর্থের অপচয় হিসেবে গণ্য হবে। এ কথা উল্লেখ করে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের ও অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনাটা বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে, এটা কেবল রঙ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয় না। আমরা বার বার দেখেছি বাসগুলো রঙ করা হলে ছয় মাসও সেটা টেকে না। এর কারণ বাসগুলোর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার ফলে এক বাস আরেক বাসকে চাপ বা ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। এতে রঙ তো কি, বাসের বডি পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে অল্প সময়ে নতুন একটি বাসও লক্কর ঝক্কর বাসে রুপান্তরিত হয়ে যায়। এখন এক বছরের ভেতর কতবার রঙ করাবে বাস মালিকরা? এতে শুধু রঙের টাকাটার অপচয়।
তিনি বলেন, রঙের নাম করে বাসগুলো সপ্তাহখানেক বসিয়ে রাখা হয়। এতে আর্থিকভাবে বাস মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনতে যথাযথ উদ্যোগী হতে হবে বিআরটিএ ও বাস মালিকদের। তবেই বাসের রঙও দীর্ঘ সময় টিকে থাকবে, বাসগুলো দ্রুত নষ্ট হবে না এবং সড়কে জীবনও ঝড়বে না। সর্বোপরি একটি সুন্দর সড়ক আমরা পাবো।
![ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)