ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:০১:২৯ পিএম

উদীয়মান অর্থনীতিতে নতুন সংকট তারল্য ঘাটতি

২৩ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:৪ এএম

উদীয়মান অর্থনীতিতে নতুন সংকট তারল্য ঘাটতি

ছবি: সংগ্রহীত

কভিড মহামারী-পরবর্তী ঘানা, শ্রীলংকা ও জাম্বিয়ার একাধিক দেশ ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে আর্থিক চাপ অনেকটা কমিয়েছে। এমন অবস্থায় নতুন সংকট দেখছে আইএমএফ ও অন্য সংস্থাগুলো। তাদের মতে, নগদ অর্থের গুরুতর অভাব অনেক উদীয়মান অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, যা উন্নয়ন প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্তের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেয়া উদ্যোগকে ধীর করে দিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও পশ্চিমা ঋণদাতাদের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়তে পারে। খবর রয়টার্স

 


ওয়াশিংটনে চলমান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বৈঠকের আগে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এমন একসময় বিষয়টি আলোচনায় এল, যখন পশ্চিমারা বিদেশে অর্থ সাহায্য দিতে ক্রমবর্ধমান হারে অনিচ্ছুক।

 


অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আরবিসি ব্লুবের পোর্টফোলিও ম্যানেজার ক্রিশ্চিয়ান লিব্রালাটো বলেন, ‘পরিস্থিতি এ অর্থে অনেকের জন্য একটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ যে ঋণ পরিষেবা বেড়েছে, ঋণ নেয়া আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে এবং অর্থ সরবরাহের বাহ্যিক উৎস কমে গেছে।’

 

 

বিদ্যমান ঋণ সংকট মোকাবেলায় নতুন উপায়ে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় স্বল্পমেয়াদি তারল্য সহায়তা দিতে এরই মধ্যে আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন অর্থ বিভাগের শীর্ষ কূটনীতিকরা।

 

 

বিভিন্ন দেশ, বেসরকারি ঋণদাতা, বিশ্বব্যাংক ও জি২০ প্রতিনিধিদের নিয়ে দরিদ্র দেশের নগদ প্রবাহ সমস্যা নিয়ে কাজ করছে গ্লোবাল সভরেন ডেট রাউন্ডটেবল। আজ ওয়াশিংটনে তাদের আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু আফ্রিকার ঋণ খরচ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে এমন গ্রুপ লিকুইডিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির চেয়ার ভেরা সোংওয়ের মতে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সীমিত বাজেট ও অপরিবর্তনীয় সংকটের মধ্যে ভুগছে দেশগুলো। তিনি বলেন, ‘এসব দেশ ঋণ পরিশোধের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত ব্যয় এড়িয়ে চলছে। এমনকি উন্নত অর্থনীতিতে একই অবস্থা বিরাজ করছে।’

 

 

অলাভজনক পরামর্শক গোষ্ঠী ওয়ান ক্যাম্পেইনের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে অ্যাঙ্গোলা, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানসহ ২৬টি দেশ নতুন করে বিদেশ থেকে অর্থায়ন পাওয়ার চেয়ে আগের বাহ্যিক ঋণের জন্য বেশি অর্থ খরচ করেছে। প্রায় এক দশক আগে অনেক দেশই প্রথমবার বন্ডে ধার নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সুদহার বেড়ে যাওয়ায় এ-সংক্রান্ত খরচের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাশ্রয়ী মূল্যে পুনঃঅর্থায়ন এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে।

 

 

ওয়ানের বিশ্লেষণ বলছে, নিট অর্থপ্রবাহ ২০২৩ সালে উন্নয়নশীল দেশের জন্য নেতিবাচক দিকে ঘুরে গেছে। এর অর্থ তারা নতুন করে বাহ্যিক অর্থায়ন পাওয়ার চেয়ে আগের নেয়া ঋণের জন্য বেশি অর্থ খরচ করেছে। ২০২৪ সালে এ নিট নেতিবাচক নগদ প্রবাহ আরো সম্প্রসারণ হবে।

 

 

ফাইন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট ল্যাবের গবেষণা পরিচালক ইশাক দিওয়ান বলেন, ‘আইএমএফের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী সামাজিক বৈশ্বিক আর্থিক নিরাপত্তা জাল এখন আর যথেষ্ট মজবুত নয়।’

 

 

বিশ্বব্যাংকে দুই দশক গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন ইশাক দিওয়ান। তার মতে, আনুষ্ঠানিক সম্পূর্ণ তথ্য হাতে না এলেও ২০২৩ ও ২০২৪ সালের নিট নেতিবাচক স্থানান্তর সম্ভবত পূর্বাভাসের তুলনায় আরো খারাপ। তিনি বলেন, ‘আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও অন্য বহুপক্ষীয় সংস্থার নতুন অর্থায়ন ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’

 

 

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কর্মকাণ্ড থেকে মনে করা হচ্ছে তারাও এ বিষয়ে একমত। সাম্প্রতিক সময়ে ১০ বছরে ঋণ সক্ষমতা ৩ হাজার কোটি ডলার বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে সারচার্জ ও সুদ কমিয়ে সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রহীতাদের খরচ বার্ষিক ১২০ কোটি ডলার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে আইএমএফ।

 

 

তবে অনেক ব্যাংকার বলছে, অনেক দেশই এখন নগদ প্রবাহের জন্য বাজারে প্রবেশে সক্ষম। জেপিমরগানের সিইইএমইএ ঋণ বিভাগের প্রধান স্টেফান ওয়েইলার মনে করেন, আর্থিক বাজারে প্রবেশে দেশগুলোর সামনে উল্লেখযোগ্য কোনো বাধা নেই। বাজার এখন অনেক প্রশস্ত।

 

 

তিনি আশা করেন, এ বছর ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় রেকর্ড ২৭ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ৩০ হাজার কোটি ডলারের রেকর্ড বন্ড ইস্যু হবে। এমনকি আগামী বছর এ বাজারে প্রবেশ করতে পারে নাইজেরিয়া ও অ্যাঙ্গোলার মতো দেশ।

 

 

কিন্তু বন্ড বাবদ খরচ বেশি হওয়ায় কেনিয়ার মতো অনেক দেশ এতে প্রভাবিত হতে পারে। এছাড়া চীন থেকে ঋণ সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় উদীয়মান দেশগুলো প্রভাবিত হচ্ছে। একসময় এসব দেশের আর্থিক সহায়তার অন্যতম উৎস ছিল বেইজিং। এমন পরিস্থিতিতে নির্ভরশীল দেশগুলো নেতিবাচক নিট নগদ প্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে। চীনের কাছ থেকে বেশি অর্থ পাওয়ার বদলে পুরনো ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে দেশগুলো। চীনা সংস্থাগুলো ২০০৮-২১ সাল পর্যন্ত বিদেশী সরকারগুলোকে অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ দেয়, যা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

 

 

উন্নয়ন ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে ঋণ সর্বোচ্চ করতে একসঙ্গে কাজের উদ্যোগ নিয়েছে। ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও আফ্রিকা ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক দেশগুলোকে আইএমএফের রিজার্ভ ‘স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস’ (এসডিআর) ডোনেট করার প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা বলে, এসডিআরের প্রতি ১ ডলার ডোনেটের বিপরীতে ৮ ডলার ঋণ পেতে পারে। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোকে অর্থ সরবরাহ বাড়াতে রাজি করানোর চেষ্টা করছে বিশ্বব্যাংক ও অন্যরা। কিন্তু নিজেরা ঋণের সঙ্গে লড়াই করায় এরই মধ্যে খরচ কমানোর পথে হাঁটা শুরু করেছে দেশগুলো। এ কারণে গ্লোবাল সাউথকে ভুগতে হবে বলে মনে করেন ইশাক দিওয়ান।

উদীয়মান অর্থনীতিতে নতুন সংকট তারল্য ঘাটতি