ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৫৪:৩০ পিএম

একের পর এক সংকট ও অভিঘাতে ধুঁকছে শিল্প খাত

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১২:৫৫ পিএম

একের পর এক সংকট ও অভিঘাতে ধুঁকছে শিল্প খাত

ছবি: সংগ্রহ

দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপগুলো একের পর এক সংকটের মুখে পড়ছে। উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগাতে না পারা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার, ডলার সংকট, কর্মীদের বেতন-ভাতা, জ্বালানি সমস্যা এবং ইউটিলিটি বিলসহ বহুমুখী খরচের চাপের কারণে শিল্পখাতের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এসব সংকটের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শ্রমিক অসন্তোষ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো বিভিন্ন সমস্যা।

 

উদ্যোক্তারা বলছেন, ডলারের দাম বর্তমানে ১২০ টাকা হওয়ায়, একদিকে পণ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে আগের মতো এলসি করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। জ্বালানির সংকটও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যার কারণে অনেক কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। বেশিরভাগ কারখানায় উৎপাদন ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে রপ্তানি খাতে, যেমন তৈরি পোশাক শিল্প, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

 

বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে, বিশেষ করে থার্মেক্স গ্রুপ এবং নোমান গ্রুপের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। থার্মেক্স গ্রুপের ১৭টি কারখানার মধ্যে ১০টি মাত্র ৩০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে এবং নোমান গ্রুপেরও উৎপাদন সক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে।

 

বিশেষজ্ঞরা জানান, গত কয়েক বছরে ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক চাপ অনুভব করছেন। কয়েকটি কারখানার মালিক বলছেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে এবং তাদের ঋণ শোধ করার চাপ বাড়ছে।

 

এদিকে, বিটিএমএ (বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন) জানিয়েছে, জ্বালানি সংকটের কারণে বস্ত্র খাতের উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। মালিকরা উদ্বিগ্ন, কারণ ডলার সংকটের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালও সংকুচিত হয়ে গেছে।

 

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, "ব্যাংকগুলোর কাজ ঠিকমতো না করার কারণে আর্থিক খাত ভঙ্গুর হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়ানোর কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংকটে পড়তে হচ্ছে।" এছাড়া, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্পখাতের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

 

এই সংকটের মধ্যেও, ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, "নিরাপত্তা জোরদার এবং আইনের শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যবসা চলানো সম্ভব নয়।"

 

এছাড়া, রপ্তানি খাতের বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান যেমন ফকির ফ্যাশন লিমিটেডও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সমস্যায় পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

 

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, "বিদেশি ক্রেতারা আমাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।"

 

এ মুহূর্তে বাংলাদেশে শিল্পখাতের সংকট আরও গভীর হচ্ছে এবং এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন, যাতে পরিস্থিতি আরও অবনতি না ঘটে।

একের পর এক সংকট ও অভিঘাতে ধুঁকছে শিল্প খাত