ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ২:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এনবিআরের রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৬৯%
৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ২:২০ পিএম
![এনবিআরের রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৬৯%](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/08/20241108112804_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মোট ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়সীমায় রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ৯৩ হাজার ২৪২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অর্থবছরের শুরু থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, মূল্যস্ফীতি, আমদানি ও উৎপাদন কমে আসার মতো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকিগুলোও এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এর মধ্যেও রাজস্ব আহরণে এ প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
তবে একক মাস হিসেবে অক্টোবরে রাজস্ব আহরণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ২৬ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। আর গত মাসে আহরণ হয়েছে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এনবিআরের এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে অক্টোবরে রাজস্ব আহরণ কমেছে দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মাসটিতে ৩৫ হাজার ৬১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রকাশিত রাজস্ব আহরণ বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে এনবিআর আয় করতে পেরেছে ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ কম রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছে এনবিআর।
এ বিষয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ভাষ্য হলো অর্থবছরের শুরুর মাসগুলোয় রাজস্ব আহরণে কিছুটা ঘাটতি সবসময়ই দেখা যায়। এছাড়া সামগ্রিক অর্থনীতির সূচকগুলো এখনো রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির পুরোপুরি অনুকূলে আসেনি। সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ঘাটতির পরিমাণও কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
এর আগে গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। পরে তা সংশোধন করে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। আহরণ হয়েছে ৩২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। এ চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু অক্টোবরে আহরণের লক্ষ্য ছিল ১০ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। হয়েছে ৮ হাজার ৩৩ কোটি টাকা।
মূলত আমদানি কমে যাওয়ার কারণেই অক্টোবরে রাজস্ব আহরণ কমেছে বলে মনে করছেন এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস: পলিসি ও আইটি) হোসেন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বিগত অর্থবছরের তুলনায় এবার আমদানি কমেছে। ওজন, নোটিংকৃত বিল অব এন্ট্রি, খালাসকৃত কনটেইনারের সংখ্যা—সবকিছুই এবার কমেছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ডিজেল ইত্যাদি সর্বাধিক রাজস্ব প্রদানকারী পণ্যের আমদানি কমেছে। পাশাপাশি আমদানি কমেছে সম্পূরক শুল্কযুক্ত বিলাসপণ্যেরও। এছাড়া এ বাবদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে অনাদায়ী পাওনা আছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আবার ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শুল্কছাড় দেয়া হয়েছে। এসবের প্রভাবেই খাতটিতে লক্ষ্যমাফিক রাজস্ব আহরণ করা যায়নি। আবার এখনো বিপুল পরিমাণ অখালাসকৃত পণ্যও কাস্টমসে আটকে রয়েছে। এগুলো খালাস হলে সেখান থেকেও রাজস্ব আসবে। কিন্তু অনেকেই এখন টাকার সংকটে আমদানি করা পণ্য ছাড় করাতে পারছেন না।’
স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাবদ অক্টোবরে ১৩ হাজার ৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকার আহরণ লক্ষ্য ধরেছিল এনবিআর। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১০ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ সময় গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন) ড. মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘আইবাস++ অক্টোবর ৩১ পর্যন্ত হিসাব করে। ভ্যাট বিভাগ ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত হিসাব করে। কারণ, কোনো মাসের ভ্যাট দাখিলপত্র পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত জমা দেয়া যায়। ভ্যাট বিভাগের হিসাব ২০ নভেম্বরের দিকে পাওয়া যাবে। সে হিসাব এ হিসাবের তুলনায় বেশি হতে পারে। তবে রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে এ কথা সঠিক। জুলাই ও আগস্টে একটা বিশেষ পরিস্থিতি ছিল। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও তা কাটিয়ে ওঠেনি। আমরা মাঠ পর্যায়ে এখন ব্যাপক মনিটরিং করছি। বছরের শেষ নাগাদ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার আশা করি।’
আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ১১ হাজার ৫৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৮ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়াকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন এনবিআরের সাবেক সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট) ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে আগের বছরের চেয়ে ২৫-৩০ শতাংশ বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়ার প্রবণতা শুরু হয়। তখন থেকেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। সে ধারাবাহিকতা এখনো বহাল রয়েছে। এছাড়া বড় ব্যবসায়ীরা পলাতক। বড় আমদানিকারক ও বড় উৎপাদকদের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পও বাদ দিচ্ছে সরকার। সেই কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমেছে। রাজস্ব আহরণও কমেছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘গত অর্থবছরের অক্টোবরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা পিছিয়ে আছি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আদায় অবশ্যই বাড়বে, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ভীষণ চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রতি অর্থবছরে অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫-৪০ শতাংশের বেশি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে থাকার এটাও একটা কারণ। এবার আমরা অনলাইনে রিটার্ন নিচ্ছি। মানুষকে যেন কর অফিসে আসতে না হয়, সেই ব্যবস্থার দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী ডিসেম্বরে ভ্যাট দিবস ও সপ্তাহ এবং জানুয়ারিতে কাস্টমস দিবস ঘিরে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা সক্ষম হব, আশা করছি। প্রধান উপদেষ্টাও সম্মানিত করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য আহ্বান করেছেন।’