ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:২৬:৩৩ পিএম

এনবিআর সংস্কারে আনা হবে আমূল পরিবর্তন

২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:০ পিএম

এনবিআর সংস্কারে আনা হবে আমূল পরিবর্তন

ছবি: সংগ্রহ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন এনবিআর সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্য আবদুল মজিদ। তিনি বলেছেন, এনবিআর সংস্কারের জন্য সব অংশীজনের মতামত এবং পরামর্শক কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবনা তৈরি হবে। রাজস্ব নীতি সংস্কার, রাজস্ব প্রশাসন, ডিজিটালাইজেশন, ট্যাক্স আইন, ভ্যাট আইন ও কাস্টমস আইনের পর্যালোচনার মাধ্যমে এই প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব কথা তিনি সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বলেন।

 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আরও জানান, এনবিআরকে স্বাধীন করতে হবে এবং এ জন্য ১৯৭২ সালের আইন অনুসরণের প্রস্তাব দেন। এছাড়া, এনবিআরে দক্ষ ও জ্ঞানী লোক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, নিয়োগের সময় যোগ্যতার ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রস্তাবনা তৈরি করা উচিত।

 

অর্থনীতিবিদ ও এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কারটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে হলে সেটি স্থায়ী ও কার্যকর হবে। তবে, যদি রাজনৈতিক দল, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার না করা হয়, তবে এক বছর পর তা আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। এনবিআর সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্যের গুরুত্বের কথা বলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রধান ড. মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সংস্কার কার্যকর হবে না।

 

এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ আহমেদ বলেন, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) খাতের ওপর ভ্যাটের বোঝা অনেক বেশি। এসএমই খাতের সমস্যা নিয়ে এখনও এনবিআর সংস্কারে কোনো প্রস্তাব আসেনি। তিনি জানান, সিম্পল ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ১৭ থেকে ২০ শতাংশ হয়ে যায়। এছাড়া, আমদানি পর্যায়ে শুল্ক নির্ধারণের নিয়মও সমস্যাজনক।

 

এনবিআরের ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থার সমালোচনা করে ফরিদ হোসেন বলেন, ৯০ দশক থেকে ডিজিটালাইজেশন শুরু হলেও এখনও আয়কর, শুল্ক ও কাস্টমসের তথ্য সমন্বিত অনলাইন ব্যবস্থায় আনা সম্ভব হয়নি।

 

রাজস্ব ফাঁকি ও আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতি প্রসঙ্গে এনবিআর সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতি ও অর্থ পাচার রোধ করা প্রয়োজন।

 

এদিকে, আইসিএবি'র প্রেসিডেন্ট মারিয়া হাওলাদার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে কারণ ঘন ঘন ট্যাক্স নীতি পরিবর্তন করা হচ্ছে। তিনি মিনিমাম ট্যাক্সকে ব্যবসায়িক বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং সংস্কারের পর এই ধরনের নীতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

 

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, ট্যাক্সের উপর এক্সপেরিমেন্ট ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর। তিনি ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পরামর্শ দেন।

 

ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বলেন, এনবিআরের সংস্কার এ বার আলোর মুখ দেখবে কারণ এটি সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে করা হচ্ছে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক হাফিজুর রহমান ট্যাক্স প্রক্রিয়ার মধ্যে ভীতি দূর করার পরামর্শ দেন।

 

দৈনিক সমকালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর জাকির হোসেন প্রশ্ন তোলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া সত্ত্বেও এনবিআর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

 

এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্য তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এনবিআরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা প্রয়োজন এবং তিনি তার প্রস্তাবে বলেন, কর ফাঁকি কমানোর জন্য আরো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

মাসরুর রিয়াজ মনে করেন, এনবিআরের সংস্কারের কাজ সফল হতে হলে রাজস্ব ব্যবহারের পরিকল্পনা ও আর্থিক শৃঙ্খলার দিকে যথাযথ নজর দিতে হবে।

এনবিআর সংস্কারে আনা হবে আমূল পরিবর্তন