ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৪৮:১১ পিএম

এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার

১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:৫০ পিএম

এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এক সময় ‘উদীয়মান টাইগার’ হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, দুর্নীতি, বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এবং সঠিক নীতির অভাবের কারণে দেশের শেয়ারবাজার তার সম্ভাবনা অনুযায়ী বিকশিত হতে পারেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ কেবল শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের পুঁজিবাজারকেই টপকাতে পারেনি, বরং এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অবস্থান নিকৃষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে গত দুই বছরে শ্রীলংকা এবং পাকিস্তান ভালো পারফরম্যান্স দেখালেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হতে পারেনি। পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চলমান অযোগ্যতা এবং সিদ্ধান্তের পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর অনাস্থার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যে হুটহাট সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে, তার ফলে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।

 

 

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেনে অংশগ্রহণের পরিমাণ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। গত বছর গড় লেনদেন ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ভারতের পুঁজিবাজারের গড় লেনদেনের তুলনায় অনেকটাই কম। পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ইত্যাদির পুঁজিবাজারে লেনদেনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি ছিল। ২০২৪ সালে, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ১ শতাংশ, যেখানে ভারতে এ হার ছিল ১২ শতাংশ।

 

 

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০ হলেও, এই সংখ্যা যথেষ্ট নয় এবং গুণগত মানের অভাব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এখানে নতুন এবং প্রলোভনমূলক পণ্য বা কোম্পানি আসেনি, যা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষিত করতে পারে। কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে খারাপ কোম্পানির সংখ্যাধিক্য এবং আইনি কাঠামোর দুর্বলতা।

 

 

পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, সরকারের নির্ধারিত কার্যকরী নীতিমালা ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ জরুরি। দেশের পুঁজিবাজারের অগ্রগতির জন্য একটি সুশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। পুঁজিবাজার যদি শক্তিশালী হতে পারে, তাহলে ব্যাংক খাতের সংকটও অনেকটা কমে আসবে এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

 

 

তুলনামূলকভাবে, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন এবং বাজার গভীরতা অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ২০২৪ সালে ভারতের পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৮ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের ২ হাজার ৯৯৬ কোটি ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নতির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে এটি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।

 

 

এছাড়া, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুর্বল নীতির কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এবং গত দুই বছরে দেশের পুঁজিবাজারের নেতিবাচক রিটার্নও শেয়ারবাজারের চিত্র আরও উদ্বেগজনক করেছে।

 

 

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সুশাসন, নীতির ধারাবাহিকতা এবং দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। দেশের পুঁজিবাজারে গুণগতমানের কোম্পানি এবং সঠিক শেয়ারবাজারের সংস্কারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 

 

আগামী দিনে ডিএসইর পক্ষ থেকে আসন্ন পরিকল্পনাগুলো পুঁজিবাজারের শুদ্ধায়ন এবং কার্যকরী সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করলে, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং ‘উদীয়মান টাইগার’ হিসেবে বাংলাদেশ তার আগের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।

এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার