ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৪৮:৪৪ পিএম

ওষুধ রফতানির লক্ষ্য নিয়ে নতুন কারখানা নির্মাণ করেছে ওরিয়ন

১০ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:৮ এএম

ওষুধ রফতানির লক্ষ্য নিয়ে নতুন কারখানা নির্মাণ করেছে ওরিয়ন

ছবি: সংগ্রহীত

ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম কারখানাটি নির্মাণ করেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে গুণগত মান বজায় রেখে উৎকৃষ্ট উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

 

 

২০১৯ সালে আধুনিক ওরিয়ন ফার্মা পার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের উৎপাদনক্ষমতা এবং বিশ্বমানের মাননির্ধারণ সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। কারখানাটির অবস্থান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে।

 

 

২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মোট বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা। বর্তমানে ফ্যাক্টরিতে মোট কর্মী সংখ্যা ১ হাজার ১৯ জন। ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত পণ্যগুলো হলো ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, সাসপেনশন, পাউডার ফর সাসপেনশন, ক্রিম অয়েন্টমেন্ট, ইনজেকশন, টপিক্যাল প্রিপারেশন। বিএমআরইর পর বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ছয় হাজার কোটি ইউনিট।

 


১৯৮৭ সাল থেকে তেজগাঁওয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত পরিসরে কারখানা স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। ২০১৯ সালে আধুনিক ওরিয়ন ফার্মা পার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের অত্যাধুনিক কারখানার মূল লক্ষ্যই হলো পশ্চিমা বিশ্বের বাজার, বিশেষ করে USFDA অনুমোদিত দেশগুলোয় ব্যাপকভাবে রফতানি করা। যাত্রা শুরুর পর, কভিড-১৯-এর কারণে গত সাড়ে চার বছরে আমাদের অগ্রগতি বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছে।

 

 

তবে এরই মধ্যে আমরা USFDA ও UKMHRA-এর কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করে সর্বাধুনিক স্থাপনা ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ফিনিশড প্রডাক্ট বিদেশে রফতানির জন্য প্রস্তুত একটি কারখানা নির্মাণ সম্পন্ন করেছি।

 

 

আমরা আশা করছি যে ২০২৫ সালের মধ্যে কারখানার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে উন্নত পশ্চিমা দেশের বাজারে রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের অনুমোদন অর্জন করতে সক্ষম হব। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে দেশের বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রতি বছর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ফিনিশড প্রডাক্ট আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করতে সক্ষম হব।

 

 


কারখানাটি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল উন্নত পশ্চিমা বিশ্বের বাজার, বিশেষত USFDA ও UKMHRA অনুমোদিত দেশগুলোয় বৃহৎ পরিসরে রফতানি করা। এ লক্ষ্য অর্জনের পথে আমাদের বেশকিছু উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রথমত, সর্বোত্তম মানের প্রযুক্তি ও সঠিক যন্ত্রপাতি নির্বাচন করা একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

 

 

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক বাজার থেকে সঠিক উৎপাদন মেশিনারি ও ইউটিলিটি যন্ত্রপাতি যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে। যন্ত্রপাতি সংগ্রহের পাশাপাশি কারিগরি দক্ষতা নিশ্চিত করতে আমরা বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ কনসাল্টিং ফার্ম নিযুক্ত করেছি। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনশক্তিকে দক্ষ করে তোলার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, যাতে কারখানার অপারেশন ও পরিচালনা দক্ষভাবে পরিচালিত হয়। দ্বিতীয়ত, অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমাদের বেশকিছু সাহসী ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।

 

 

USFDA ও UKMHRA-এর কঠোর নীতিমালা অনুসরণ এবং সর্বাধুনিক স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ফলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি স্থানীয় ব্যাংকগুলোর কাছে ব্যাখ্যা করতে আমাদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কিছু বৈদেশিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার পর, স্থানীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসে যা প্রকল্পটিকে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তৃতীয়ত, কারখানায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পাওয়াও একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় আমরা সব নিয়মকানুন মেনে সফলভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।

 

 

উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছি। এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্যকর সমাধান গ্রহণ করেছি। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ প্রতিটি ধাপে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সময়োচিত সমর্থন প্রদান করে প্রকল্পটি সফল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে। আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালের মধ্যেই উন্নত পশ্চিমা দেশের বাজারে রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের অনুমোদন অর্জন করে ২০২৬ থেকে পূর্ণমাত্রায় রফতানি করতে সক্ষম হব।

 

 

বর্তমানে ওরিয়ন ফার্মার কারখানায় এক হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি বাজারজাত, বিক্রয়, বিতরণ, ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে আরো তিন হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া সহযোগী প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী এবং বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীর মাধ্যমে আরো হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

 

 

আমাদের কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা বাজারের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক বেতন ও ভাতা ছাড়াও উন্নত কর্মপরিবেশ উপভোগ করেন। তারা দেশ-বিদেশে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ, মাসিক পারফরম্যান্স মূল্যায়ন, কর্মস্থলে বিনামূল্যে মানসম্পন্ন খাবার, স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াতের জন্য পরিবহন সুবিধা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, পারফরম্যান্স বোনাস এবং অর্জিত ছুটির নগদায়নের সুযোগসহ আরো অনেক সুবিধা পান। এসব সুযোগ-সুবিধা আমাদের কর্মীদের উন্নয়ন ও কর্মক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে, যা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সফলতার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।

 

 

বর্তমানে আমাদের কারখানায় কোনো বিদেশী কর্মী বা প্রকৌশলী নিয়োজিত নেই। তবে কারখানা সম্প্রসারণের সময় এবং দেশীয় কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কনসাল্টিং ফার্মের সহায়তা নিয়ে থাকি। এই ফার্মগুলো বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স গাইডলাইন মেনে নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে, যা আমাদের প্রকল্পের সফলতা এবং গুণগত মান নিশ্চিত করতে সহায়ক।

 

 

আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালের মধ্যেই এ বাজারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের অনুমোদন সম্পন্ন করে ২০২৬ সাল থেকে পূর্ণমাত্রায় রফতানি কার্যক্রম শুরু করতে পারব। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের উচ্চমানসম্পন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল ফিনিশড প্রডাক্ট রফতানি করছি, যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, কার্ডিওভাসকুলার ওষুধসহ বেশকিছু থেরাপিউটিক শ্রেণীর ওষুধ।

 

 

এগুলো গুণগত মান ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আমাদের পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে প্রস্তুত করা হয় এবং বর্তমানে এশিয়া (মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন), আফ্রিকা (নাইজেরিয়া, সোমালিল্যান্ড, লেসোথো, সোমালিয়া, সুদান), ইউরোপ (আর্মেনিয়া ও কসোভো), ওশেনিয়া (ফিজি), ও লাতিন আমেরিকাসহ (গুয়াতেমালা) বিভিন্ন মহাদেশে রফতানি হচ্ছে। আমরা এসব অঞ্চলের পরিবেশকদের সঙ্গে দৃঢ় ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলেছি, যা আমাদের পণ্য দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে বিভিন্ন দেশের রোগীদের কাছে পৌঁছানোর পথ সুগম করেছে। পাশাপাশি আমরা নতুন বাজারে প্রবেশের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছি, যাতে আমাদের পণ্যগুলো আরো বিস্তৃতভাবে বিশ্বব্যাপী মানুষের সেবায় ব্যবহৃত হয় এবং এতে বাংলাদেশের সুনাম আরো উজ্জ্বল হয়।

ওষুধ রফতানির লক্ষ্য নিয়ে নতুন কারখানা নির্মাণ করেছে ওরিয়ন