ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:৩০:৫৮ পিএম

কম আমদানি ও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় চালের বাজার অস্থিতিশীল

চালের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় সরকার দ্রুত আমদানির পদক্ষেপ নিয়েছে।

৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০ পিএম

কম আমদানি ও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় চালের বাজার অস্থিতিশীল

ছবি: সংগ্রহ

চাল আমদানি কম এবং স্থানীয় উৎপাদন থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় আমন মৌসুমে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সরকার এখন সরকারি মজুত বাড়াতে আমদানির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারি গুদামে মজুত কম থাকায় বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে এবং দাম বেড়েছে। সাধারণত আমন মৌসুমে সরবরাহ বেশি থাকায় চালের দাম কম থাকে, তবে এবছর পরিস্থিতি ভিন্ন।

 

সরবরাহ সংকটের কারণে ওএমএস এবং টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল সরবরাহে অসুবিধা হচ্ছে। চালের ক্রমবর্ধমান দামের ফলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক মাসে মোটা চালসহ সব ধরনের চালের দাম ৩-৪ টাকা বেড়েছে। স্বর্ণা ও চায়নার মতো মোটা চাল এখন ৫৪-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ডিসেম্বরের শেষে ছিল ৫০-৫৫ টাকা। মাঝারি ও মিহি চালের দামও বেড়েছে।

 

চালের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় সরকার দ্রুত আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জানুয়ারিতে ১.৭৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে এবং অর্থবছরের বাকি সময়ে আট লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হবে। এ জন্য সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ২,৮৯৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬,২৭০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩৮ কোটি টাকা আগের অর্থবছরের আমদানির বকেয়া পরিশোধে ব্যয় হবে।

 

সরকার ইতোমধ্যে ২.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির দরপত্র চূড়ান্ত করেছে এবং ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন এবং পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকেও চাল আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে।

 

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার প্রতি কেজি ৪৭ টাকায় সিদ্ধ চাল সংগ্রহের চেষ্টা করছে, তবে বাজারে এ চালের দাম ৫৫-৫৮ টাকা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সরবরাহে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি ছাড়া মজুত নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর আমন মৌসুমে এক লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বন্যার কারণে তা অর্জন সম্ভব হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর সায়েমা হক বিদিশা বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরবরাহ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক সরবরাহ ঘাটতি পূরণে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

সরকারি মজুতের তথ্য অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি গুদামে ৮.০৩ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৪.১৬ লাখ মেট্রিক টন গম মজুত রয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তর ২.৭৪ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করেছে।

 

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার ও বেসরকারি খাতে মোট ১.৪১ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে ডিসেম্বর মাসে বেসরকারি আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

 

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকার টিসিবির মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করে আসছে। তবে জানুয়ারি মাসে সরবরাহ ঘাটতির কারণে এ কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। মজুতবিরোধী আইন কার্যকর করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ওএমএসের মাধ্যমে চার লাখ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। তবুও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

কম আমদানি ও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় চালের বাজার অস্থিতিশীল