ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন নেমেছে ৪০ মেগাওয়াটে
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০ পিএম

ছবি: সংগ্রহ
কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় রাঙ্গামাটির কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমে গেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের দৈনিক ২৪২ মেগাওয়াট সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে একটি ইউনিটে উৎপাদন হচ্ছে কেবল ৪০ মেগাওয়াট। চলতি ফেব্রুয়ারিজুড়েই এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকৌশলীরা বলছেন, বর্তমানে আরো বেশি উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও সারা বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কাপ্তাই হ্রদের পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে। প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছেন, আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে হ্রদের পানি আরো কমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন নামতে পারে ২৫-৩০ মেগাওয়াটে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর কাপ্তাই হ্রদের পানি কর্ণফুলী নদীতে ছাড়া হয়। আবার কর্ণফুলীর পানি শোধনাগারে পরিশোধন করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কর্ণফুলীর পানি বছরজুড়ে প্রবাহিত না হলে সমুদ্রের পানির প্রভাবে নদীর লবণাক্ততা বাড়তে পারে। এতে ব্যাহত হতে পারে ওয়াসার পানি পরিশোধন। তাই চট্টগ্রাম নগরে পানি সরবরাহের সঙ্গে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের সম্পর্ক থাকায় বছরজুড়েই সচল রাখতে হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন।
এদিকে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানি পরিমাপের রুল কার্ড (সময়সূচিভিত্তিক পানি ওঠানামার মাপ) অনুযায়ী গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হ্রদে পানি রয়েছে ৮৯ দশমিক ৫ মিন সি লেভেল (এমএসএল)। যদিও স্বাভাবিকভাবে পানি থাকার কথা ৯৩ দশমিক ৯০ এমএসএল। রুল কার্ডের হিসাবেই বর্তমানে হ্রদে সাড়ে ৪ এমএসএল পানি কম রয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বা রাঙ্গামাটি জেলায় বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় হ্রদের পানি বাড়ার সুযোগ নেই। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনাও নেই।
এর আগে ২০২৪ সালের আগস্টের শেষ দিকে ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ সীমা ১০৮ দশমিক ৬৯ এমএসএল পানি সংরক্ষিত হয়। সে সময়ে হ্রদের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি স্লুইস গেট বা স্পিলওয়ে খুলে দেয়া হয়। আগস্টের দিকে পাঁচ ইঞ্চি করে স্লুইস গেট খোলা রাখা হলেও সেপ্টেম্বরে হ্রদের পানি বাড়ায় সর্বোচ্চ পাঁচ ফুট পর্যন্ত খুলে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তখন কেন্দ্রটির পাঁচ ইউনিট দিয়ে উৎপাদন হয় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, ‘কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু রাখা হয়েছে। এক ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট। কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় আপাতত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ নেই। উৎপাদন এর চেয়ে কমানোর পরিকল্পনাও আপাতত নেই, যদি বৃষ্টিপাত নাও হয়।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ মাত্র ৩০-৪০ পয়সা (সব ইউনিট সচল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া সাপেক্ষে)। তবে ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানো-কমানো হয়।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদনসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ ব্যয় হয় তা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি। তাই এ কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো গেলে সার্বিক ব্যয় কম হয় বিপিডিবির। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমছে। তাই এ কেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একাধিক ইউনিট সচল রাখার সুযোগ থাকলেও বছরজুড়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে একটি ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কর্ণফুলী নদীতেও পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা যাবে।
প্রসঙ্গত, ষাটের দশকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। এতে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। পরে ১৯৬২ সালে বাঁধ দেয়া অংশে চালু করা হয় কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কৃত্রিমভাবে হ্রদের পানি সংরক্ষণ করে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। শুরুর দিকে কেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৮০ মেগাওয়াট। পরে ধাপে ধাপে সক্ষমতা বাড়িয়ে ২৪২ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। এ উৎপাদনের পুরো বিদ্যুৎ যায় জাতীয় গ্রিডে। কাপ্তাই হ্রদে বাঁধ দেয়া অংশে ১২ দশমিক ২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের ১৬টি জলকপাট বা স্লুইস গেট রয়েছে। এগুলো একসঙ্গে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক পানি নির্গমন করতে পারে। হ্রদে ১০৯ এমএসএলের (বিপৎসীমা) কাছাকাছি পানি হলে জলকপাট দিয়ে পানি নির্গমন করা হয়।
