ঢাকা মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫ - ৪:৪৮:২৪ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

১১ মার্চ, ২০২৫ | ২:৫২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না : এনবিআর চেয়ারম্যান

১১ মার্চ, ২০২৫ | ২:৫২ পিএম

কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না : এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি: সংগ্রহ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, "কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না। কর দিয়ে দেউলিয়া হয়েছে এমন কথা কখনো শুনিনি।" তিনি মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ মন্তব্য করেন।

 

 

প্রাক-বাজেট আলোচনায় কর অব্যাহতি বিষয়ে এক প্রস্তাবের বিপরীতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, "নতুন করে কর অব্যাহতির কথা কেউ বলবেন না। বরং যতটুকু অব্যাহতি আছে, তা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে।" তিনি সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত উক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "বই কিনে দেউলিয়া হয় না। আমি বলব কর দিয়ে দেউলিয়া হয়েছে বলে শুনিনি। কর তো আয়ের ওপর, ব্যয়ের ওপর নয়। তাহলে দিতে সমস্যা কোথায়?"

 

 

 

প্রাক-বাজেট আলোচনার অংশগ্রহণকারীরা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন । আইসিএমএবি সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, আইসিএবি সভাপতি মারিয়া হাওলাদার’, ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভ্যাট প্রফেশনাল ফোরাম, জমির মৌজা মূল্য হালনাগাদের প্রস্তাব।  

 

 

আইসিএবির প্রতিনিধি স্নেহাশিস বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে ভূমি ও ফ্ল্যাটের বাজারমূল্যের তুলনায় মৌজা মূল্য কম থাকায় অপ্রদর্শিত অর্থের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি প্রস্তাব করেন, "জমি ও ফ্ল্যাটের মৌজা মূল্য হালনাগাদ করে ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার, যাতে এনবিআরের রাজস্ব বৃদ্ধি পায় এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার কমে আসে।"

 

 

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, "জমির প্রকৃত মূল্য মৌজায় নিয়ে আসার পক্ষে আমি। তবে সমস্যা হচ্ছে, এতে জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আমরা কর কমাতে চাই, তবে রাজস্ব আদায়ের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থানও বিবেচনা করতে হবে।"

 

 

 

বিদেশি প্রতিষ্ঠান দেশে ব্যবসা পরিচালনা করলেও তাদের অফিস না থাকায় কর প্রদানে অনীহা প্রকাশ করছে বলে মন্তব্য করেন স্নেহাশিস বড়ুয়া। তিনি বলেন, "বিদেশি বিভিন্ন প্রজেক্টের প্রযোজ্য কর সরকারকেই বহন করতে হয়, যা বড় ধরনের কর ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি করছে।"

 

 

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, "যারা চুক্তি তৈরি করে, তাদের এসব দিক বিবেচনায় নেওয়া উচিত। অনেক বিদেশি প্রকল্পে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকে, কিন্তু করের বোঝা সরকারের ওপর পড়ে। অথচ প্রকৃতপক্ষে কর তাদেরই দেওয়া উচিত।"

 

 

 

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, করদাতার রিটার্নে সব সম্পদ প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ই-টিআইএন (ETIN) অবশ্যই বিআরটিএ, ভূমি রেকর্ড অফিস এবং সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা উচিত। এতে সম্ভাব্য করদাতাদের করজালের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং তারা অনলাইনে সহজেই রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

 

 

 

আইসিএবি জানায়, এনবিআর ও আইসিএবির যৌথ উদ্যোগে ডিভিএস সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা বিভিন্ন খাতের মুনাফা ও বিক্রয় নির্ণয় করতে সাহায্য করছে। বর্তমানে বহু উৎসে কর আরোপের বিধান থাকলেও সব খাত থেকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আসে না। এতে করদাতাদের ওপর অনুপযুক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং এনবিআরও এত খাত মনিটর করতে সমস্যায় পড়ছে।

 

 

 

এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, সরকার কর আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও স্বয়ংক্রিয়তা আনতে আগ্রহী। কর অব্যাহতি হ্রাস, মৌজা মূল্য হালনাগাদ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর নিয়ন্ত্রণ, রিটার্ন সংযুক্তকরণ এবং উৎসে কর হ্রাসের মতো বিষয়গুলো ভবিষ্যতে রাজস্ব ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।

কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না : এনবিআর চেয়ারম্যান