ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২০ মে, ২০২৪ | ৮:৩৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ
কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা
২০ মে, ২০২৪ | ৮:৩৮ এএম
![কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/05/20/20240520083808_original_webp.webp)
রাজস্ব আহরণ পদ্ধতিকে সহজ ও স্বচ্ছ করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন। কিন্তু এতটুকুই যথেষ্ট নয়। শেষ পর্যন্ত এটা রাজনৈতিক সদিচ্ছারও বিষয়। একটা সাহসী উদ্যোগ নেয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সেই রাজনৈতিক সমর্থন দিতে হবে। তাহলেই কর ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল ‘ডিজিটালাইজেশন অব দ্য ট্যাক্সেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার’ শীর্ষক এক ডায়ালগে তারা এ মত তুলে ধরেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে রাজধানীর একটি হোটেলে এ আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। অনুষ্ঠানে একটি গবেষণাপত্রও উপস্থাপন করা হয়। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এটি উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায়কে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করা গেলে সাত বছরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। রাজস্ব আদায়ে বাধ্যতামূলক ই-ফাইলিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে জিডিপির ৫ শতাংশ বাড়বে, যা চার বছরের মধ্যে বেড়ে হবে ৩২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। দেশের ২৫ শতাংশ কর প্রদান অনলাইনের মাধ্যমে করা হলে জিডিপি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। শুধু অনলাইনে কর প্রদানের মাধ্যমে চার বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার দেশের অর্থনীতিতে যোগ করা সম্ভব।’
তবে প্রযুক্তিগত সমাধানের সঙ্গে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোও সুস্পষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্সে প্রচুর ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে, কিন্তু তা বিক্ষিপ্তভাবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে করজালের সম্প্রসারণ হচ্ছে না। কর সংগ্রহে তথ্যপ্রযুক্তি বড় একটা টুলস হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ১৪ শতাংশ করা। ২০২৪ সালে এসেও এটি সম্ভব হয়নি। রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ১৪ শতাংশ করা গেলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১ টাকাও বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হতো না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পুরোটাই বাংলাদেশ বিদেশী ঋণের ওপর নির্ভর করছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে ঋণ নিয়ে সাবেক ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। শ্রীলংকা বাদে দক্ষিণ এশিয়ার সবক’টি দেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশের থেকে বেশি।’
২০৪১ সালের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে ২৪ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এর সঙ্গে সঙ্গে একই সময়ের মধ্যে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ডিজিটালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের আধার কার্ডের মতো বাংলাদেশের এনআইডির সঙ্গে সামগ্রিক খরচ ও ট্যাক্সেশনের বিষয়টি ট্যাগ করা গেলে কর খেলাপি অনেক কমে যাবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সব পরিকল্পনা স্মার্ট হতে হবে, যা পরিমাণযোগ্য, প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী এখনো নগদ টাকা লেনদেন করতে চান, তাহলে তো আমাদের এসব ডিজিটালাইজ করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ ৷
সিপিডি ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়াতে ডিজিটালাইজেশন, অটোমেশন ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ব্যবহারের বিকল্প নেই। কর আহরণের ক্ষেত্রে হয়রানি বা দুর্নীতি কমাতে ডিজিটালাইজেশন করা হলে কর আদায়ের জায়গাটি আরো স্বচ্ছ হবে। পাশাপাশি এ পদ্ধতিতে করদাতাদের দেয়া তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা রক্ষা হবে।’
যারা কর দেয় না, যারা টাকা পাচার করে তারা অনেক বেশি শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দৃশ্যমান না হলে এনবিআর অসহায় হয়ে পড়বে। এনবিআরকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে হবে। সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘অটোমেশন মেশিন একা কিছুই করতে পারবে না। অটোমেশনের পেছনে যে মানুষগুলো বসে আছে, তারা ঠিক হয়নি। প্রতিটি মানুষকে ধরে ধরে শুদ্ধ করা এনবিআরের পক্ষে সম্ভব না। তবে আয়কর ও ভ্যাট যদি বাড়াতে হয়, তাহলে অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। দারোগা-পুলিশ দিয়ে ধরে ধরে কর আদায় করা সম্ভব না। এখানে অটোমেশন একমাত্র উপায়। এর পর থেকে অডিটও অটোমেশন সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। নথিপত্র ছাড়া আর কোনো অডিট হবে না। অডিট হবে নথিপত্রের বিচারে, মনগড়া কথাবার্তা দিয়ে নয়।’
তিনি জানান, শিগগিরই করপোরেট ট্যাক্স অনলাইন রিটার্নের আওতাভুক্ত করতে যাচ্ছে এনবিআর। ২০২০ সালের আগস্টে প্রথম স্বয়ংক্রিয় ভ্যাট দেয়ার ইলেকট্রনিক ফিসকল ডিভাইস (ইএফডি) সিস্টেম চালু করা হয়। তবে এটি যতটা কার্যকরী, ততটা প্রভাব ফেলেনি বলে মনে করে সরকারের সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতা-বিক্রেতারা সাধারণত ইনভয়েসের মাধ্যমে লেনদেন করে না। তাই ইনভয়েসকে জনপ্রিয় করতে ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে এনবিআর। টিআরপি আউটসোর্সিং বিধিমালা ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে করনেট সম্প্রসারণ করার কথাও জানান তিনি।
![কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)