ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৪৫:২৫ পিএম

কাঁচাবাজারে পলিথিনের অবসান, বিকল্পের দাবি

২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৪:২ পিএম

কাঁচাবাজারে পলিথিনের অবসান, বিকল্পের দাবি

ছবি: সংগ্রহ

সুপারশপে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধের পর গতকাল থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। গত একমাস আগে সুপারশপে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের পর তা কার্যকর হয়েছে। এতে খুশি বিক্রেতারা। কিন্তু অনেক ক্রেতাই বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। কারণ আগে যে কোন পণ্য ক্রেতারা বিনামূল্যে পলিথিনে নিতে পারতেন।

 

 

এদিকে গতকাল থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। রাজধানীর বড় কাঁচাবাজার থেকে পাড়া-মহল্লার কাঁচাবাজারেও অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। এমনকি অনেক দোকানে বিকল্প ব্যাগ রাখতেও দেখা যায়নি। ফলে ক্রেতাদের পলিথিনে করেই কাঁচাবাজার নিয়ে যেতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিনের এই অভ্যাস পরিবর্তনে সময় প্রয়োজন বলছেন ক্রেতারা। পাশাপাশি স্বল্প মূল্যে বিকল্প ব্যাগ বাজারে রাখার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

 


পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ধ্বংসকারী পলিথিন ব্যবহার রোধে লড়াই করে যাচ্ছি। দেশজুড়ে সচেতনতা তৈরিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে র‌্যালিসহ পরিচ্ছন্নতা অভিযান করে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুপারশপসহ কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এর আগে বিকল্প তৈরি করা উচিত ছিলো।

 

সরকারের এই উদ্যেগ কার্যকরে আপনার সংগঠন কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে কাজ শুরু করবো। ইতোমধ্যে রাজধানীর বাইরে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের যে সংগ্রাম তা অব্যাহত থাকবে।

 

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রজব মিয়া নামের এক দোকানদারের কাছে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ তা আমরা জানি। কিন্তু এর বিকল্প নেই। ক্রেতারা বাজার করার সময় ব্যাগ নিয়ে আসেন না। ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে আসলে আমাদেরই সুবিধা হবে বেশি। কারণ প্রত্যেকটি সবজির জন্য আমাদের আলাদা আলাদা পলিথিন দিতে হয়। 

 

এদিকে নিষিদ্ধ পলিথিনের শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন সুপারশপে মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হয়। এ সময় মনিটরিং কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে রবিবার থেকে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কার্যক্রম পরিচালনাকালে মনিটরিং কমিটির সদস্যরা কেনাকাটা করতে আসা লোকজনকে পলিথিন ব্যবহার না করতে অনুরোধ জানান। এর পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলেন।

 

মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) তপন কুমার বিশ্বাস উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাজারগুলোতে আপাতত জরিমানা করা হবে না। সতর্কতামূলক অভিযান নভেম্বরের প্রথম এক সপ্তাহ চলবে। এর পরের সপ্তাহ থেকে অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সব জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় সভাপতি ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার আইনগত ভাবে আগে থেকেই নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন থাকলেও এতদিন তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে কিছু অভিযান চললেও তা খুবই নগন্য।

 

এখন নতুন অন্তর্বতীকালীন সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করেছেন। যা আশার খবর। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুইমাস আগ থেকে পলিথিন উৎপাদনকারী ও কাঁচাবাজারে যে পলিথিন নিষিদ্ধ হবে তা প্রচারণা করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এখন দুই মাসেও যারা বিকল্প রাখেনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। এর পাশাপাশি জরুরি সচেতনতা।

 

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনের এই অভ্যাস খুব সহজেই পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে শুরুটা করতে হবে। এছাড়াও পলিথিন সেক্টরটি এখন ব্যবসায়িক খাতে পরিণত হয়েছে। তাই তাদের দিকটাও বিবেচনা করা উচিত। মূলত এই দিকটা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার কথা জানিয়েছেন এই অধ্যাপক।

কাঁচাবাজারে পলিথিনের অবসান, বিকল্পের দাবি