ঢাকা শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ - ৫:১৫:১৯ পিএম

কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যে পিছিয়ে ৪০ শতাংশ অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠান

১ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:৫৯ পিএম

কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যে পিছিয়ে ৪০ শতাংশ অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠান

ছবি: সংগ্রহ

প্রাক-শিল্প যুগ-পরবর্তী বেড়ে চলা বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে। ওই চুক্তির সঙ্গে সংগতি রেখে কার্বন লক্ষ্য ঠিক করে দেশগুলো। এর সঙ্গে প্রধান অংশীদার হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন খাতের কোম্পানিগুলো। তবে সব অঞ্চলেই যে একই ধরনের উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এমন নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে বার্ষিক মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, ৪০ শতাংশের বেশি বড় কোম্পানি, শহর ও অঞ্চল এখনো গ্রিনহাউজ গ্যাস কাটছাঁটের লক্ষ্য ঠিক করতে পারেনি। 

 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলগুলোর জোট নিট-জিরো ট্র্যাকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, নিট-জিরো কার্বন নিঃসরণ প্রতিশ্রুতি বেড়ে চলেছে। গত বছর থেকে অনেক দেশ ও কোম্পানি বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে তাদের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ, নির্বাচন ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে তাদের মনোযোগ এ লক্ষ্য থেকে সরে গেছে। এ কারণে প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান তৈরি হয়েছে।


২০৩৫ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন লক্ষ্য করে কার্বন নিঃসরণ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ ও বড় কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা। কিন্তু উভয় পক্ষই দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু লক্ষ্যকে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী পরিকল্পনায় পরিণত করাকে চ্যালেঞ্জিং ভাবছে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, এসব পরিকল্পনার অনেকগুলো জলবায়ু সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট উন্নত বা বিশদ নয়।


এ বিষয়ে নিট-জিরো ট্র্যাকারের এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নেতৃত্ব থাকা জন ল্যাং জানান, জলবায়ুবিষয়ক প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। অনেকের মাঝে প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। এছাড়া বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

 

এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরিতে ১৯৮টি দেশ, স্বাধীনভাবে পরিচালিত ৭০৬টি স্থানীয় সরকার, ১ হাজার ১৮৬টি শহর ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় দুই হাজার কোম্পানির নিট-জিরো প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপের পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চার হাজারের বেশি নাম তালিকায় উঠেছে। যাদের অর্ধেকের কম ১ হাজার ৭৫০টি আনুষ্ঠানিক নিট-জিরো লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে ১ হাজার ৭০০টি কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেনি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান নিট-জিরো লক্ষ্য ঠিক করেছে, যা গত বছরের প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে এশিয়ায় নিট-জিরো অঙ্গীকারে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গেছে।

 

নিট-জিরো ট্র্যাকার বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সাড়া দেয়া কোম্পানির সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে। কোনো নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা নেই এমন কোম্পানির সংখ্যা চলতি বছরে ৪৯৫-এ নেমে এসেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৭৩৪টি। কিন্তু বড় কিছু কোম্পানির মধ্যে এখনো অনাগ্রহ লক্ষণীয়। কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য ঠিক করেনি, এমন কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা টেসলা, ভিডিও গেমস জায়ান্ট নিনটেন্ডো ও বিনিয়োগ সংস্থা বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে।

 

প্রতিবেদনে নিট-জিরো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ‘ভালো অনুশীলনের’ উদাহরণ হিসেবে মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকা, গাড়ি কোম্পানি ভলভো ও গুগলের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৫ শতাংশ অঞ্চল, শহর ও সংস্থা নিট-জিরো ট্র্যাকারের সব মানদণ্ড পূরণ করেছে।

কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যে পিছিয়ে ৪০ শতাংশ অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠান