ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:২১:৪৪ এএম

খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি ও চাল আমদানির জন্য আরও ৪,১৫০ কোটি চায় টাকা খাদ্য মন্ত্রণালয়

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ওপেন মার্কেট সেল বা খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) থেকে চাল ও আটা সংগ্রহ করছে বেশি।

৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৩০ পিএম

খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি ও চাল আমদানির জন্য আরও ৪,১৫০ কোটি চায় টাকা খাদ্য মন্ত্রণালয়

ছবি: সংগ্রহ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি এবং চাল আমদানির জন্য অতিরিক্ত ৪,১৫০ কোটি টাকা চেয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারের ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) থেকে চাল ও আটা ক্রয় বাড়িয়েছে। এতে খাদ্য ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা গত বছরের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমান।

 

মূল বাজেটে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির জন্য ভর্তুকি হিসেবে ২,০০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, তবে বর্তমানে ওএমএসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা সংশোধিত বাজেটে ৩,৫০৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৩,২৯০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে খাদ্য ভর্তুকি বাজেট দাঁড়াবে ৬,৭৯৬ কোটি টাকা, যা মূল বরাদ্দের চেয়ে ১,৫৩২ কোটি টাকা বেশি।

 

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ওএমএসের ডিলারদের চাহিদা দ্বিগুণ হওয়ায় বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি কেজি চালে ২০ টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানির বরাদ্দ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয়। মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২,৮৯৮ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ৬,২৭০ কোটি টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

অন্যদিকে, গম আমদানির চাহিদা কম থাকায় এই খাতে বরাদ্দ ২,৮৯৮ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২,১৪৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি মজুদের মধ্যে ৭,৯২,৫৬০ টন চাল এবং ৪,১৭,৯১৭ টন গম রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ সম্ভব হবে না বলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানির প্রয়োজন হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বিনিময় হারের কারণে এই বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে।

 

ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তর ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য সরবরাহ করে। বর্তমানে ওএমএসে চাল ৩০ টাকা এবং আটা ২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ৫ কেজি চাল ও আটা সংগ্রহ করতে পারে একজন ক্রেতা। রাজধানীসহ শ্রমঘন এলাকা এবং সিটি করপোরেশনগুলোতে মোট ৯১২টি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫০ লাখ পরিবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় প্রতি কেজি চাল ১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে পারে।

 

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ওএমএসের মাধ্যমে ৫,৭৭,৮১৭ টন খাদ্যশস্য বিক্রি হয়েছে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ভর্তুকিযুক্ত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। গত নভেম্বর মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩.৮০ শতাংশ, যেখানে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.১০ শতাংশ। রাজধানীর ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্রেতা পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। শান্তিনগরের এক ক্রেতা জানিয়েছেন, দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তিনি চাল সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

 

সরকারের ভর্তুকিযুক্ত খাদ্য সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ এই সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য নিশ্চিত করাও জরুরি।

খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি ও চাল আমদানির জন্য আরও ৪,১৫০ কোটি চায় টাকা খাদ্য মন্ত্রণালয়