ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
খাদ্য মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার
৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:০ এএম
![খাদ্য মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/05/20241205151006_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
প্রায় তিন মাস পর দেশে শুরু হবে রমজান মাস। এ মাসকে সামনে রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চাল, ডাল, চিনির মতো অতি জরুরি খাদ্য মজুদের ওপর জোর দিচ্ছে।
এ জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হবে ১৫৬ কোটি টাকার চিনি-মসুর ডাল। ভারত ও মিয়ানমার থেকে চাল কেনা হবে ৮৯৮ কোটি টাকার। এ ছাড়া দেশের কৃষককে যাতে কৃষি চাষে সারের কোনো সংকটে পড়তে না হয়, তার জন্য সরকার ৩৩৯ কোটি টাকায় ৯০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে দেশের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার টন চিনি ও মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৫ হাজার টন চিনি ও ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ৫ হাজার টন চিনি কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
এই চিনি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ১১৮ টাকা ৪৩ পয়সা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে এই চিনি বিক্রি করা হবে।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে চট্টগ্রামের মেসার্স পায়েল ট্রেডার্স থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়বে ৯৬ টাকা ৬৯ পয়সা। এই মসুর ডাল টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে।
ভারত-মিয়ানমার থেকে কেনা হবে ৮৯৮ কোটি টাকার চাল : এদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন আতপ চাল এবং ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৮৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এই অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমার থেকে জিটুজি পর্যায়ে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব আনা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।মিয়ানমার রাইচ ফেডারেশন এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৫১৫ মার্কিন ডলার। এই চাল আনতে মোট ব্যয় হবে ৬১৮ কোটি টাকা।
সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতের মেসার্স মণ্ডল স্টোন প্রোডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৪৬৭ দশমিক ৭০ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
সার কেনা হবে ৩৩৯ কোটি টাকায় ৯০ হাজার টন : দেশের কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য ৬০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৩৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এই অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৩৩ কোটি ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১১ জুন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ১০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সেই চুক্তির আলোকে এখন ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। কাতার এনার্জি মার্কেটিংয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি টন ৩৬৯ দশমিক ৬৭ মার্কিন ডলার।
সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রতি টনের দাম ধরা হয়েছে ৩৪২ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯০০ ডলার।
বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের টিএসপিসিএলের জন্য ৩০ হাজার টন রক ফসফেট (৭০ শতাংশ বিপিএল মিনিমাম) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ কমিটি। এ প্রস্তাবটিও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
টিএসপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক অ্যাসিড ও রক ফসফেট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনটি দরপত্র জমা পড়ে। তিনটি দর প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ইউএসের মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই কাছ থেকে ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা-ভেটখালী মহাসড়কের দুটি দরপ্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের সিদ্ধান্ত : অন্যদিকে দুটি প্যাকেজে ‘সাতক্ষীরা-সখীপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের (পুনরায় টেন্ডার) উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। পৃথক দুটি প্যাকেজে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩১ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৮৬১ টাকা।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-সখীপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ-প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউপি-০৪-এর পূর্ত কাজের ক্রয়প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০৯ টাকা। প্রকল্পটি একনেকে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
সভায় সাতক্ষীরা-সখীপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউপি-০৬-এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
প্রকল্পের পূর্তকাজ ক্রয়ের জন্য একধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে একটি দরপ্রস্তাব রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। একজন দরপত্রদাতা রেসপনসিভ বিবেচিত হওয়ায় কার্যকর প্রতিযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। অধিকসংখ্যক দরদাতার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য টিইসি ও হোপের সুপারিশ বাতিল করে ক্রয় প্রস্তাবটি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১০ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ২৫২ টাকা। প্রকল্পটি একনেকে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
![খাদ্য মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)