ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৪৪:০৭ পিএম

গরম ঘনাচ্ছে; রমজানে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে তোড়জোড় সরকারের

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৯:০ পিএম

গরম ঘনাচ্ছে; রমজানে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে তোড়জোড় সরকারের

ছবি: সংগ্রহ

রমজান ও গ্রীষ্মের তীব্রতা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বাড়ানো এবং এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে।

 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাব অনুযায়ী, রমজানে বিদ্যুতের ব্যবহার চার হাজার মেগাওয়াটের বেশি বাড়তে পারে। এর ফলে পিক আওয়ারে বর্তমান চাহিদা ১১ হাজার ৮০৮ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে।

 

এ চাহিদা সামাল দিতে হলে সরকারকে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন স্তরের কাছাকাছি যেতে হবে। ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ রেকর্ড-সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল।

 

এ লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রাথমিক জ্বালানি আমদানির জন্য অর্থ বিভাগের কাছে আট হাজার কোটি টাকা চেয়েছে।

 

বিপিডিবি ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, রমজানের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রধানত এলএনজি ও কয়লার ওপর নির্ভর করতে হবে।

 

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে পদক্ষেপ হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা দেন, আসন্ন গ্রীষ্মে কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ২৫ ডিগ্রির নিচে রেখে এয়ার কন্ডিশনার চালাতে পারবে না।

 

তিনি জানান, এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বর্তমানে দেশে ১৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যার মোট উৎপাদন সক্ষমতা (ইনস্টলড ক্যাপাসিটি) ২৭ হাজার ৭৯০ মেগাওয়াট। যদিও প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার ৯০৬ মেগাওয়াট।

 

এর মধ্যে ৫৮টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের ৪৩ শতাংশ (১১ হাজার ৪৫২ মেগাওয়াট) এবং সাতটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০ শতাংশ (পাঁচ হাজার ৫০৫ মেগাওয়াট) সরবরাহ করে।

 

বাড়তি এলএনজি ও কয়লা আমদানি

 

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) এলএনজি বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহ আলম জানান, সরকার শুরুতে স্পট মার্কেট থেকে পাঁচটি এলএনজি কার্গো কেনার পরিকল্পনা করলেও পরে বাড়তি আরও একটি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

প্রতিটি কার্গোতে দুই হাজার ৯০০-তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস থাকে। এ আমদানির লক্ষ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর গ্যাস সরবরাহ এক হাজার ২০০ এমএমসিএফডি পর্যন্ত বাড়ানো। পেট্রোবাংলার ১৩ ফেব্রুয়ারির উপাত্ত অনুযায়ী, বর্তমানে এ সরবরাহের হার ৮২৫ এমএমসিএফডি।

 

এছাড়া, পেট্রোবাংলা নতুন ওয়ার্ক-ওভার করা করা কূপ থেকে আরও ৬০-৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা করছে।

 

বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম টিবিএসকে বলেন, দেশের সাতটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে কয়লা আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। কেবল মার্চ মাসের জন্য ২.৫-৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

তিনি বলেন, 'রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত কয়লা আমদানি করা হবে এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সেজন্য তহবিল সরবরাহ করা হচ্ছে।'

 

বিদ্যুৎ খরচ ব্যবস্থাপনা

 

সরকার অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ খরচ কমাতে চাহিদা-নির্ভর ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিচ্ছে।

 

দেশের এয়ার কন্ডিশনারগুলো (এসি) প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কর্মকর্তাদের ধারণা, এসির তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নির্ধারণ করলে কমপক্ষে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব।

 

এসি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ বিভিন্ন খাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্দেশনা জানাবে।

 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানাবেন, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করবেন, আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সচিবালয়সহ অন্য সরকারি দপ্তরগুলোতে এ নীতি কার্যকর করবেন।

 

উপদেষ্টা বলেন, সরকার আর্থিক সংকটে রয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানির জন্য বিদেশি ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য সরকার বৈদেশিক মুদ্রা প্রদানের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা নিচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে।

গরম ঘনাচ্ছে; রমজানে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে তোড়জোড় সরকারের