ঢাকা শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫ - ৮:১২:৫৬ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮:৫৪ এএম

অনলাইন সংস্করণ

গ্যাস-কয়লার সংকট, যোগ হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াটের আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র

৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮:৫৪ এএম

গ্যাস-কয়লার সংকট, যোগ হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াটের আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র

ছবি: সংগ্রহীত

দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বর্তমানে জ্বালানি সংকটে ভুগছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস বা কয়লা সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যোগ হতে যাচ্ছে একটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র—পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এটি বর্তমানে উৎপাদনে যাওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হতে পারে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ৭ হাজার ৩১২ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে।

 

 

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল)। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজার টন কয়লা মজুদ করা হয়েছে এবং কয়লা সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ডিসেম্বরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা, প্রথম ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) উৎপাদন শুরু করতে আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্য রয়েছে জুনের মধ্যে, তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিপিডিবি বা বিদ্যুৎ বিভাগের অনুরোধে যেকোনো সময় উৎপাদন শুরু করতে প্রস্তুত তারা, যদি ব্যাকফিড পাওয়ার সংযোগ পাওয়া যায়।

 

 

এ সময়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম বড় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো জ্বালানির সংকটে উৎপাদন থামিয়ে রেখেছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে গ্যাস সংকটের কারণে, ফলে বিপিডিবি বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া পড়েছে। অন্যদিকে, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে এবং রামপাল কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু রয়েছে, বাকি ইউনিট বন্ধ। এ ছাড়াও, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হতে যাচ্ছে, যা দুই মাস বন্ধ থাকবে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব রয়েছে, যা জ্বালানি সরবরাহে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, "আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মূলত উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও সুসংগঠিত পরিকল্পনা না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে।"

 

 

বর্তমানে দেশে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৫ হাজার ৯৯২ মেগাওয়াট, এবং আরপিসিএল-নরিনকো এর নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যুক্ত হলে এটি মোট ৭ হাজার ৩১২ মেগাওয়াট হবে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় নির্মিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের, বাকি ৫০ শতাংশ চীনা কোম্পানি নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেডের। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫৪ কোটি ডলার, এবং প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে, আর্থিক অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ।

 

 

আরএনপিএল সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনের শাটডাউন দরকার ছিল, কিন্তু পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে চালু রয়েছে, তাই এ সময় লাইন বন্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিপিডিবি জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহের চাপ বাড়ার কারণে এখনই ব্যাকফিড পাওয়ার সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়, ফলে উৎপাদন শুরুর সময় সাময়িকভাবে পিছিয়ে গেছে।

 

 

আরএনপিএল-নরিনকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রস্তুত রয়েছে এবং ব্যাকফিড পাওয়ারের পর আগামী মার্চের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ইউনিট চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন শুরু হবে।

 

 

কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দৈনিক প্রায় ১২ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে, এবং কোম্পানিটি ইতিমধ্যে তিন ধাপে কয়লা আমদানি করেছে। তবে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঞ্চালন বন্ধ না রাখায় উৎপাদন কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।

গ্যাস-কয়লার সংকট, যোগ হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াটের আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র