ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১১:৪২:৫৩ এএম

গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ৫ শতাংশ করবে সরকার

৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৩৩ এএম

গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ৫ শতাংশ করবে সরকার

ছবি: সংগ্রহ

সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে তার মালিকানা এবং পরিচালনা কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে চলেছে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে তার শেয়ারহোল্ডিং ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার এবং পরিচালনা পর্ষদে সরকারের প্রতিনিধিত্ব কমানোর পরিকল্পনা করেছে। এ জন্য সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ সংশোধনের একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে যা এখন অংশীজনদের মতামতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

 


গ্রামীণ ব্যাংকের আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী মূলত ২০১১ সালের আগের কাঠামোতে ফেরত যাওয়ার উদ্যোগ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সে সময়, ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারের শেয়ার ছিল ২৫ শতাংশ এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের হাতে ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকার কোনো মূলধন যোগ না করায় তার অংশীদারিত্ব ধীরে ধীরে ৫-৮ শতাংশে নেমে আসে। এখন সরকার ওই অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধার করে, ঋণগ্রহীতাদের অংশীদারিত্ব আরো বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নতুন আইন প্রস্তাব করেছে।

 


মালিকানা কাঠামো প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারের শেয়ারহোল্ডিং ৫ শতাংশে নেমে আসবে, আর ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার ৯৫ শতাংশে পৌঁছাবে।

 


পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন বর্তমান ১২ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সরকারের ৩ জন পরিচালক ও ঋণগ্রহীতাদের ৯ জন পরিচালক রয়েছে। নতুন প্রস্তাবে ঋণগ্রহীতাদের ১১ জন পরিচালক নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে এবং সরকারের প্রতিনিধিত্ব সীমিত থাকবে।

 


চেয়ারম্যান নির্বাচনের পদ্ধতি বর্তমান আইনে চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও, প্রস্তাবিত খসড়ায় এই ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে পর্ষদ সদস্যদের মধ্য থেকেই।

 


ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ বর্তমান আইনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তবে খসড়ায় বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে তার মেয়াদ ৬৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।

 


নতুন আঞ্চলিক অফিসের অনুমোদন বর্তমান আইনে নতুন আঞ্চলিক অফিস খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়ায় এই শর্তটি তুলে দেওয়া হয়েছে।
ইউনূসের সময়ে সরকারি হস্তক্ষেপ

 


২০১১ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে অপসারণের পর, সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডিং বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। সেই সময়, সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশে ফেরানো হয় এবং সরকার পরিচালনা পর্ষদে আরও ৩ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়।

 


নতুন খসড়া আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত একটি নতুন ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কথা। এই কার্যক্রম পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায় এবং বিভিন্ন ব্যাংক এতে অংশগ্রহণ করে।

 


এখন, খসড়া আইনটি অংশীজনদের মতামত নেওয়ার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সকল পক্ষের মতামত সংগ্রহ করা হবে।

 

এ পরিবর্তনগুলি গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত পরিচালনা এবং মালিকানার কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে, যা দেশের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ৫ শতাংশ করবে সরকার