ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ২:৫৫:৩৬ এএম

ঘুরে দাঁড়ায়নি শেয়ারবাজার

৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৩:৫৪ পিএম

ঘুরে দাঁড়ায়নি শেয়ারবাজার

ছবি: সংগ্রহ

দেশের শেয়ারবাজারে দেখা যাচ্ছে না আশার আলো। ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা মূলধন উদ্ধার নিয়ে শঙ্কায় বাজার বিনিয়োগকারীরা। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে শেয়ারবাজারে চলেছে নীরব হরিলুট। শেয়ারবাজারে সিন্ডিকেট কারসাজিতে চলছে একের পর এক দরপতন। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমনটা আশা করেন বিনিয়োগকারীরা। তবে সেই আশাতেও গুড়েবালি।

 

দিন যতই গড়াচ্ছে ততই খাদের ভেতরে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। এক দিন ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেলে টানা কয়েক দিন চলে দরপতন। মূলত দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। এদিকে দরপতনসহ শেয়ারবাজার কারসাজির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দফায় দফায় মানববন্ধন করেছে বিনিয়োগকারীরা। তবুও এর সুরাহা মেলেনি। এ যেন দরপতনের বৃত্তেই আটকে গেছে শেয়ারবাজার।

 

অন্যদিকে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু হতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর লেনদেন শুরু হলেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এক ঘণ্টা কম লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে এমন বিঘ্ন ঘটার দিনে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। অন্যদিকে ডিএসইর সার্ভার জটিলতা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

ডিএসইতে লেনদেনে বিঘ্ন ঘটলেও অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী লেনদেন হয়েছে। তবে এ বাজারটিতেও দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্যসূচকেরও পতন হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টায় ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার কথা। তবে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে দেড় ঘণ্টা পর বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে লেনদেন শুরু হয় এবং দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত স্বাভাবিক লেনদেন চলে। আর ২টা ৫০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত চলে পোস্ট ক্লোজিং সেশন।

 

নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাত্বিক আহমেদ শাহ বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করা সম্ভব হয়নি। সফটওয়্যারের কোনো সমস্যা আছে কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না, সফটওয়্যারের কোনো সমস্যা নেই। নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়েছে।

 

নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের পুরো সময়জুড়েই এই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রাও বাড়তে থাকে।

 

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭০টির এবং ৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে নেমেছে।

 

অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

 

মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

 

এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ফাইন ফুডসের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৮ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রবি।

 

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে—ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, রূপালী ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ব্যাংক এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড।

 

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৭টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

 

ডিএসইর সার্ভার জটিলতা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সার্ভার জটিলতায় রোববার নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু হতে দেরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আইটি কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় দেড় ঘণ্টা পর অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএসইর লেনদেন চালু হয়।

 

যথা সময়ে ট্রেডিং কার্যক্রম চালু করতে না পারায় বিনিয়োগকারী ও বাজারে অংশগ্রহণকারীসহ সবার লেনদেনে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। তাই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। ডিএসইর প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যথা সময়ে ট্রেডিং কার্যক্রম চালু করতে না পারায় বিনিয়োগকারী ও বাজারে অংশগ্রহণকারীসহ সবার সাময়িক অসুবিধার জন্য ডিএসই আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

ঘুরে দাঁড়ায়নি শেয়ারবাজার