ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৮:১৯:৪১ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ১০:২৯ এএম

অনলাইন সংস্করণ

চলতি অর্থবছরের আট মাসে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯%

২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ১০:২৯ এএম

চলতি অর্থবছরের আট মাসে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯%

ডলার সংকটে গত অর্থবছর আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এ সময় আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পায় ঋণপত্র (এলসি) খোলা। সরকারের কড়াকড়ি নীতির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছর অক্টোবরে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। এরপর থেকে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৬ মাস ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি চলে আমদানিতে।

 

যদিও চলতি অর্থবছর ফেব্রæয়ারিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমদানি প্রবৃদ্ধি। ১৬ মাস পর তা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবে সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত আট মাসে আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি এ সময়ে এলসি খোলা কমেছে প্রায় চার দশমিক ২৩ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর প্রথম আট মাসে মোট আমদানি হয়েছে ৪৪ দশমিক ১০৮১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫২ দশমিক ১৯০২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আট মাসে আমদানি কমেছে আট দশমিক ০১০১ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ সময় শুধু চিনি ও জ্বালানি তেল আমদানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাকি সব পণ্যই আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম পণ্য আমদানি হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রæয়ারিতে। ওই মাসে পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল চার দশমিক ৬২৪ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছর ফেব্রæয়ারিতে পণ্য আমদানি হয়েছে পাঁচ দশমিক ২৪৮ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ ফেব্রæয়ারিতে আমদানি বেড়েছে ৬২৪ মিলিয়ন ডলার বা ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

 

চলতি অর্থবছর আমদানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ঋণাত্মক ছিল আগস্টে। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৪৮ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছর একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগস্টে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল। পরের মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, যা ছিল ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৭৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ১৯২ বিলিয়ন ডলার।

 

এদিকে গত নভেম্বরে দেশে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ৮৯১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৫৯২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি কমেছে এক দশমিক ৭০১ বিলিয়ন ডলার বা ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছর অপর মাসগুলোর মধ্যে জুলাইয়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ, ডিসেম্বরে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ ও জানুয়ারিতে সাত দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর জানুয়ারি মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম ঋণাত্মক ছিল।

 

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আট মাসে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে চাল আমদানি কমেছে ৯৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মূলত ধান উৎপাদনে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় চাল আমদানি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সামান্য কিছু সুগন্ধি চাল আমদানি হয়েছে এ সময়ে। আট মাসে গম আমদানি কমেছে সাত দশমিক ৮২ শতাংশ।

 

খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিও কমেছে ধারাবাহিকভাবে। যদিও এ সময় চিনি আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছর আট মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি কমেছে ৩১ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে চিনি আমদানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

 

চলতি অর্থবছর আমদানি বৃদ্ধিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। আট মাসে এর আমদানি বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে তুলা আমদানি কমেছে ৩০ শতাংশের কিছু বেশি, সুতা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য সাত শতাংশ এবং অন্যান্য মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ১৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।

 

এদিকে চলতি অর্থবছর আট মাসে (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) প্রধান ছয়টি খাতেই এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে। এর মধ্যে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ, মাধ্যমিক পণ্যে ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামাল চার দশমিক ০৯ শতাংশ, মূলধনি যন্ত্রপাতি ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং জ্বালানি তেল ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

 

অন্যদিকে আট মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, মাধ্যমিক পণ্যে আট দশমিক ৮২ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামাল ২৫ দশমিক ০৬ শতাংশ, মূলধনি যন্ত্রপাতি ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ২১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং জ্বালানি তেল ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। তবে অন্যান্য খাতে এলসি খোলা বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ ও নিষ্পত্তি কমেছে চার দশমিক ০৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের আট মাসে আমদানি কমেছে ১৫.৪৯%