ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:১৮:৫৯ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২:০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

চলতি বছরে পোলট্রি শিল্পে ক্ষতি ৭৫০ কোটি টাকা

২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২:০ পিএম

চলতি বছরে পোলট্রি শিল্পে ক্ষতি ৭৫০ কোটি টাকা

ছবি: সংগ্রহ

একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী ব্রিডার্স শিল্পে ধস নেমেছে। চলতি বছরে এই খাতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। এই লোকসান সমন্বয়ের সুযোগ, যথাদ্রুত সম্ভব নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য পুনঃমূল্যায়ন এবং প্রয়োজনে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান করেছে ‘ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (বিএবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএবি’র বার্ষিক সাধারণ সভায় এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয় এবং ব্রিডার শিল্পসহ সামগ্রিকভাবে পোলট্রি ও ফিডশিল্প রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

 

সংগঠনের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) ও প্যারেন্টস্টক (পিএস) বাচ্চার দর বৃদ্ধি, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, কোটাবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, কারফিউ, অপ্রত্যাশিত বন্যা, অতিবৃষ্টি, হিট-ওয়েভ, রোগজীবাণুর সংক্রমণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সরকারের ডিম আমদানির সিদ্ধান্তসহ নানা কারণে পোলট্রি ব্রিডার্স শিল্পের জন্য চলতি বছর ছিল একটি লোকসানি বছর। এ বছর অনেক ছোট-মাঝারি এমনকি বড় ব্রিডার ও বাণিজ্যিক খামারও বন্ধ কিংবা বিক্রি হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের ব্যাংকের দেনার মুখে পড়েছে।

 

কখনও উৎপাদন কমেছে আবার কখনও অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। আর এ অস্থিরতায় ব্রিডার খামার ও হ্যাচারি প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান করলেও সুযোগ সন্ধানী মধ্যস্বত্ব¡ভোগীরা ঠিকই মুনাফা করেছেন। মধ্যস্বত্ব¡ভোগী এ শ্রেণিটিই তাদের মুনাফা-সহায়ক পরিস্থিতি টিকিয়ে রাখতে গণমাধ্যমের কাছে মনগড়া তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে উৎপাদনকারীদের ভিলেন হিসেবে চিত্রায়িত করেছে এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

 

তিনি বলেন, উৎপাদনকারীদের শত্রু বানিয়ে কিংবা ক্ষতি করে- উৎপাদন, অর্থনীতি কিংবা উন্নয়ন কোনোটাই বেগবান করা সম্ভব নয়। উৎপাদনশীল খাত বড় হলেই বিনিয়োগ বাড়বে, উদ্যোক্তা বাড়বে, দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে।

তিনি আরও বলেন, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রিডার্স শিল্পে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। এ লোকসান সমন্বয়ের সুযোগ দিতে হবে, যথাদ্রুত সম্ভব নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে, প্রয়োজনে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রভিটা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুন নবী ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সাম্প্র্রতিক সময়ে ব্যাংকের সুদের হার, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডলারের দাম আরও একধাপ বেড়েছে কিন্তু মুরগির বাচ্চার দর বাড়ছে না বরং কমছে। আজকে অর্ডার দিলে ন্যূনতম ৪৫ দিনের আগে পিএস বাচ্চা পাওয়ার আশা করা যায় না। আর বিদেশ থেকে পিএস বাচ্চা পেতে হলে ন্যূনতম ১২০ দিন আগে বুকিং দিতে হয়। ঋণপত্র (এলসি) খুলে বাচ্চা আমদানি করে উৎপাদন খরচ যা পড়ছে, ডিওসি বিক্রি করে সে খরচ তোলা যাচ্ছে না।

 

তিনি আরও বলেন, পাইকারি বিক্রেতারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এমআরপি’র চেয়েও অধিক মূল্যে বাচ্চা বিক্রি করেছেন অথচ এজন্য ব্রিডার ফার্মগুলোকে দোষী করা হয়েছে কিন্তু অন্যায্য মুনাফা লুটেছে মধ্যস্বত্ব¡¡ভোগীরা। এদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

 

তিরি বলেন, ব্রিডার কোম্পানিগুলো সাধারণ খামারির কথা ভেবেই ন্যূনতম দামে ডিওসি বিক্রি করছে। তারা যদি এমআরপি’র অতিরিক্ত দামে বাচ্চা না কিনতো তবে মধ্যস্বত্ব¡¡ভোগীরা অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারত না। তিনি বলেন, উৎপাদনকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংকের ঋণে জর্জরিত হচ্ছে কিন্তু মধ্যস্বত্ব¡ভোগীরা ঠিকই দিন দিন ফুলে ফেঁপে বড় হচ্ছেÑ কারণ তাদের তো কোনো ঝুঁকি নেই।

 

এছাড়াও বিএবি নেতারা বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে যে কৌশলপত্রটি প্রণয়ন করা হয়েছে তা প্রতি তিন মাস পরপর পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে, সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য- উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে, সরকার যেহেতু সর্বোচ্চ যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছেন সেহেতু উৎপাদনকারী ব্রিডার ফার্মগুলো যেন সে দামে বাচ্চা বিক্রি করতে পারেন সেটি নিশ্চিতেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে; ঝুঁকি বিবেচনায় পোলট্রি ও ব্রিডার্স শিল্পের জন্য সুদের হার ন্যূনতম করতে হবে; সর্বোপরি প্রান্তিক খামারিরা যেন ডিম ও মুরগির নায্য দাম পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

 

তারা বলেন, পোলট্রি শিল্প ধ্বংসের জন্য একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে। প্রান্তিক খামারিদের নাম ভাঙিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ১ জানুয়ারি থেকে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার নতুন চক্রান্তে মাঠে নেমেছে। এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নিলে তারা দেশীয় পোলট্রি শিল্প ধ্বংস করবে এবং দেশের বাজারকে অপশক্তির হাতে তুলে দিতে সফলকাম হবে।

চলতি বছরে পোলট্রি শিল্পে ক্ষতি ৭৫০ কোটি টাকা