ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ পিএম
![চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/10/20241210160321_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
চলনবিলঅধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের শুঁটকি মাছের চাহিদা বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদনও। চাহিদা ভালো থাকায় বাজারে দামও চড়া এই শুঁটকি মাছের। উৎপাদনকারীরা বলছেন, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছেন তাদের। তবে একটি মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে সিরাজগঞ্জে শুঁটকির উৎপাদন বাড়বে। পাশাপাশি মৎস্যজীবীরাও ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে মনে করছেন।
বাজারে মিঠাপানির শুঁটকির চাহিদা সবসময়ই বেশি। এর মধ্যে চলনবিলের শুঁটকির খ্যাতি দেশজোড়া। চলনবিল-অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের চাতালগুলোয় প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় আড়াইশ টন দেশী প্রজাতির মাছের শুঁটকি।
অক্টোবর থেকে পরের বছরের মার্চ শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম। এই সময়ে সাধারণত পুঁটি, চিংড়ি, টেংরা, খলসে, পাতাশি, চাঁদা, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কইসহ বিভিন্ন দেশী মাছের শুঁটকি উৎপাদিত হয়। ছইয়ে ঢাকা চালার নিচে বাঁশের মাচায় স্তূপ করে শুকানো হয় শুঁটকি। দেশী মাছের এসব শুঁটকি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশে। ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ছে মিঠাপানির মাছের শুঁটকির চাহিদা।
চলনবিল-অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার অর্ধশতাধিক স্থানে টাকি, চিংড়ি, শোল, টেংরা, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে পুঁটি মাছের শুঁটকির পরিমাণই বেশি।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের পাশে তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি, নওগাঁ, নাদোসৈয়দপুর; উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর, উধুনিয়া, বড়পাঙ্গাসী এবং শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী ও পোতাজিয়াসহ তিন উপজেলার শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শতাধিক ব্যবসায়ী। আর তাদের চাতালগুলোয় কাজ করেন দুই হাজারের বেশি নারী ও পুরুষ। শ্রমিকরা জানান, শীতের শুরুর দিকে মাঠে তেমন কাজ থাকে না। তাই কাজের জন্য শুঁটকির চাতাল বেছে নেন তারা।
উৎপাদনকারীরা জানান, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেন না তারা। এ কারণে তাদের উৎপাদিত শুঁটকির স্বাদ অক্ষুণ্ন থাকে। মানে ভালো হওয়ায় খুচরা ক্রেতাদের মধ্যেও চাহিদা রয়েছে এসব শুঁটকির।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৩৫ টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনকারীরা বলছেন, প্রচুর পরিমাণে উন্নতমানের শুঁটকি উৎপাদন করলেও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এই এলাকায় একটি সংরক্ষণাগার থাকলে বর্ষাকালে মাছ ধরে রেখে শীতের শুরুতে শুঁটকি তৈরি করা যেত।
তাড়াশ উপজেলার মান্নান নগরের শুঁটকি ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আড়ত থেকে বিভিন্ন দামে মাছ কিনে আমরা চাতালে নিয়ে আসি। এরপর সেগুলো কেটে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করি। আমাদের শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয়। এমনকি এখানকার শুঁটকি রফতানি হয় বিদেশেও। তবে সিন্ডিকেটে করে বিক্রির কারণে আমরা সবসময় ন্যায্যমূল্য পাই না। সরকারিভাবে বাজার তদারকি করে সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হলে আমরা লাভবান হতাম।’
এই ব্যবসায়ী জানান, পুঁটি মাছের শুঁটকি কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা, টাকি ৩৫০, শোল আকারভেদে ৮০০-১ হাজার টাকা, চেলা ৬০০, মলা ৫০০, বাইম ১ হাজার, বাতাসি ৮০০, গুচি আকারভেদে ৭০০-১ হাজার, কাঁচকি ৭০০, বোয়াল ৮০০-১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহিনুর আলম বলেন, ‘শুঁটকি এখন রফতানি পণ্য। চলনবিলের মিঠাপানির মাছ থেকে উৎপাদিত শুঁটকির মান ভালো। যারা শুঁটকি উৎপাদন করছেন আমরা তাদের প্রতিনিয়ত মনিটর করছি। গত বছর জেলায় ১৮৫ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩৫ টন।’
![চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)