ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১১:২৮:৪২ পিএম

চীনের অভীষ্ট অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখনো ঝুঁকির মুখে

১৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৪৮ এএম

চীনের অভীষ্ট অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখনো ঝুঁকির মুখে

ছবি: সংগ্রহীত

চীনের অর্থনীতি তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের জন্য দেশটি তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে বছরের শেষ নাগাদ অভীষ্ট প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে তাদের।

 


সরকারি হিসাব অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি আগের প্রান্তিকের তুলনায়ও কম। আগের প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধির আকার গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণের চেষ্টা যে কার্যকর হয়নি, এটি তারই প্রমাণ।’

 


২০২২ সালের শেষে কভিড-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরও দেশটির অর্থনীতিতে স্থবিরতা থেকে গেছে। চীনের ভঙ্গুর আবাসন খাত এখনো অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নীতিনির্ধারকরা সম্প্রতি কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক খাতে রিজার্ভের শর্ত শিথিল করে ঋণ বিতরণের সুযোগ বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান আবাসন খাতে বন্ধকি কমিয়ে আনা।

 

 

তবে তারা উল্লেখ করার মতো কোনো প্রণোদনা প্রকল্প শুরু করেনি। মুডি’স অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ হ্যারি মারফি ক্রুজ মনে করেন, এ ধরনের প্রকল্প টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হতে পারত। তবে কাঠামোগত সমস্যা মোকাবেলাই প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

 

তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, তৃতীয় প্রান্তিকে অর্জিত প্রবৃদ্ধিকে মোটামুটি ভালোই বলা যায়। গত সপ্তাহে প্রকাশিত খুচরা বিক্রি ও কারখানায় উৎপাদনের পরিমাণ পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি ছিল। ফলে বোঝা যায়, প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে।

 

 

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সংকটময় পরিস্থিতিতেও দেশটির অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল এবং ক্রমাগত এটি ভালোর দিকেই যাচ্ছে।’ তবে বিশ্লেষকদের বরাতে এপির খবরে বলা হয়েছে, ‘টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারার ঘটনা সরকারের উদ্বেগ বাড়াতে বাধ্য। দেশটি যদি তাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায়, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।’

 

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক প্রধান এসওয়ার প্রসাদ বলেন, ‘চলতি বছরে চীনের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা এখন পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

এদিকে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে চীনে নতুন বাড়ির দাম বেশ কমেছে। এটি আবাসন খাতে অবনতির চিত্রই তুলে ধরে। চীনা ব্যাংক খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আইএনজির প্রধান অর্থনীতিবিদ লিন সং বলেন, ‘আবাসন বাজার চীনের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। যতক্ষণ আবাসন খাত অস্থিতিশীল থাকবে, নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা ততই কমবে। আর এটি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রাকে এখনকার মতোই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে থাকবে।’

 

 

তবে গতকাল চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না জানিয়েছে, তারা ব্যাংকগুলোকে ব্যবসা ও ব্যক্তিগত খাতে ঋণ সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দুর্বল শেয়ারবাজারে সহায়তা বাড়ানোর কথাও জানিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের পর অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাও নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তবে তাদের প্রচেষ্টা চীনের অর্থনৈতিক উদ্বেগ কমাতে পারে কিনা এখনই তা বলার সময় আসেনি।

চীনের অভীষ্ট অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখনো ঝুঁকির মুখে