ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৫:০৪:৩৫ এএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ২:১২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ২:১২ পিএম

ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশে রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় খাত হল মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), কিন্তু বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ব্যবসায়ী-কর্মকর্তার যোগসাজশের কারণে ভ্যাটের প্রায় অর্ধেক আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের মোট তিন কোটি ৫০ লাখ ব্যবসায়ী তালিকাভুক্ত হলেও, এনবিআরের কাছে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার, এবং সেখানেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত রিটার্ন জমা দেয় না।

 

 

বিগত ছয় মাসে দেশের ভ্যাট আদায় লক্ষ্য ছোঁয়ার পরিবর্তে ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে, যা ভ্যাটের সম্ভাবনা থেকে অনেক কম। এনবিআরের অটোমেশন পদ্ধতির অভাবে ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ফাঁকিবাজি এবং দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে, ফলে সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হয়নি।

 

 

এফবিসিসিআই (বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন) জানায়, তাদের আওতায় সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী থাকা সত্ত্বেও, বড় অংশই ভ্যাট দেয় না। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট এক কোটি ১৮ লাখ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগই ভ্যাটের আওতার বাইরে।

 

 

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬ হাজার কোটি টাকা, তবে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় হচ্ছে, তবে এতে অসৎ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনিয়ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের কিছু অংশ হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং রাজস্ব আয় কমছে।

 

 

ভ্যাট শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এনবিআর নতুন ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করার পরিবর্তে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় করতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। তাদের মতে, এভাবে কাজ করলে সমস্যা সমাধান হবে না, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিয়মিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।

 

 


এনবিআরের গতকালের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিছু পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর ফলে বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন এবং ভ্যাটের হার আগের স্তরে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। তাদের মতে, ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে বরং ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।

 

 

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরি বাবু জানিয়েছেন, এনবিআরকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে এবং অটোমেশন পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায়ের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলছেন, অটোমেশনের মাধ্যমে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর জন্য দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে।

 

 

এদিকে, ভ্যাট ফাঁকি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ৭ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়েছে, আর বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মোট ভ্যাট ফাঁকি প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।

 

 


বিশেষজ্ঞরা এবং ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যদি এনবিআর অটোমেশন পদ্ধতি কার্যকর না করে, তাহলে রাজস্ব আদায় ও জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাদের মতে, দেশের কর ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে দুর্নীতি ও ভ্যাট ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে।

 

 

 

এছাড়া, একাধিক ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে যে, অটোমেশন ব্যবস্থার দিকে না যাওয়ার কারণে তারা নিয়মিত ভ্যাট দেওয়ার পরও দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন।

ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা