ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১০ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৪৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ
জট কমাতে শতভাগ পণ্য খালাসে প্রাইভেট আইসিডি'র উদ্যোগ
১০ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৪৬ এএম
![জট কমাতে শতভাগ পণ্য খালাসে প্রাইভেট আইসিডি'র উদ্যোগ](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/10/20241110094558_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বন্দরে জট কমাতে এবং দ্রুত জাহাজ ত্যাগে শতভাগ আমদানি পণ্য খালাস করতে চায় প্রাইভেট আইসিডি। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ধরনের পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্যের মাত্র ৩৮ ধরনের পণ্য খালাস হয় প্রাইভেট আইসিডিতে। বাকি ৯ শতাধিক আমদানি পণ্য খালাস হয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। গেল সেপ্টেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আগের মতো ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দর থেকে খালাসের অনুমতি দেয়।
বন্দর সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্ট পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে জট এবং জাহাজ আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ বেড়ে যায়। কন্টেইনারের স্তূপ বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়ে যান আমদানিকারকরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত পণ্য ছাড়ের উদ্যোগ নেয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আবেদন করা হয় ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য বন্দর থেকে সরাসরি খালাসে অনুমতি দিতে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দর অভ্যন্তর থেকে খালাসের অনুমতি দেয় কাস্টমস।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার এ কে এম খায়রুল বাসার বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে প্রাইভেট আইসিডিগামী ৩৮ ধরনের পণ্য ডিপোর পাশাপাশি বন্দর থেকে খালাসের অনুমতি দেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানিকারকদের সরাসরি খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, মসুর ডাল, গম, ছোলা, সরিষা, পশুখাদ্য, কাঁচা তুলা, ওয়েস্ট পেপার, স্ক্র্যাপ, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, সার, হার্ড কোক, মার্বেল চিপস, বল ক্লে, সোডা অ্যাশ, পিভিসি রেজিন, স্টাপল ফাইবার, খেজুর, চিনি, বিটুমিন, বেভারেজের খালি ক্যান, মার্বেল পাথর, সোডিয়াম সালফেট, গ্লোবার সল্ট, উড পাল্প, রাউন্ড লগ, সয়াবিন মিল এক্সট্রাকশন, ডিডিজিএস, রাইস বিন, কর্ন গ্লাটার মিল, রেপ সিড এক্সট্রাকশন, পাম ক্যামেলস, মাইজ, সয়াবিন ও কার্বন ব্লকসহ আরও কয়েক ধরনের পণ্য।
তবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, শতভাগ পণ্য প্রাইভেট আইসিডি থেকে ছাড় করা হলে তো ভালো কথা। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা ২১ প্রাইভেট আইসিডির মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া সবগুলোর সেবার মান তেমন ভালো না। কোনো কোনো প্রাইভেট আইসিডিতে কন্টেইনার রাখারও জায়গা থাকে না। নগরীর পতেঙ্গা থেকে কাটগড় পর্যন্ত এলাকার দুটি আইসিডির সামনে রাখা হয় কন্টেইনার।
তিনি বলেন, প্রাইভেট আইসিডি সময়মতো মতো আমদানি পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে গেলে আমাদের সরাসরি পণ্য খালাসের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হতো না। দেরিতে নেওয়ার কারণে কন্টেইনার প্রতি চার্জ পরিবহনসহ ব্যয় বেড়ে যায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। মূলত আমদানিকারকের ব্যয় কমাতে বন্দরে জট এড়াতেই সারসির পণ্য খালাসের অনুমতি নেওয়া হয়ে আসছে। বাস্তবে এর সুফলও মিলছে। শতভাগ পণ্য প্রাইভেট আইসিডি খালাস করতে চাইলে সেবার মান অনেক বেশি বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে বিকডার সাধারণ সম্পাদক রহুল আমিন সিকদার সময়ের আলোকে বলেন, সেপ্টেম্বরে কাস্টমসের অনুমতি পাওয়ার পর বন্দরে জট কমেনি, আগের মতোই আছে। বরং বন্দর থেকে সরাসরি খালাস শুরু হওয়ায় ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট বেড়েছে। বন্দরে পণ্য জট কমাতে সরাসরি পণ্য খালাসের অনুমতি কোনো সমাধান নয়। বন্দরে যত ধরনের পণ্য আমদানি হয় সবই খালাস করতে হবে প্রাইভেট আইসিডি থেকে।
এতে কেবল বন্দরে কন্টেইনার জট কমবে। জাহাজের আসা যাওয়ার সময় স্বাভাবিক থাকবে। বিশ্বের বড় বড় বন্দর সফর করে দেখেছি কোথাও বন্দর থেকে আমদানি পণ্য সরাসরি খালাস হয় না। শতভাগ পণ্য খালাস হয় প্রাইভেট আইসিডি থেকে। এতে ওইসব বন্দরগুলো বছরজুড়েই জটমুক্ত থাকে। আবার পণ্য নিয়ে আসা জাহাজগুলো সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্দর ত্যাগ করতে পারছে। আমাদের বন্দরে আসা জাহাজগুলো আসা-যাওয়ায় এখনও ৭২ ঘণ্টা লাগছে। সময় ক্ষেপণ হচ্ছে শুধু জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা সংকটে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দর চায় সব কন্টেইনার প্রাইভেট আইসিডিতে চলে যাক। আমদানি কন্টেইনার আইসিডি থেকে ছাড় হলে বন্দরে গাড়ি-লরি কম প্রবেশ করবে। অনেক ধরনের ঝামেলামুক্ত থাকবে বন্দর। তবে আমদানিকারকদের আগ্রহের কারণেই ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দর থেকে ছাড় করানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনেক আমদানিকারক চান তাদের পণ্য দ্রুত খালাস করতে। বন্দর থেকে আমদানি পণ্য সরাসরি খালাস করলে আমদানিকারকরা সেই সুবিধা পাবেন।
সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, শতভাগ পণ্য প্রাইভেট আইসিডিতে খালাস করা যাবে না। আইসিডিগুলো জাহাজ থেকে আমদানি পণ্য খালাসের পর সময় মতো নিয়ে যায় না। এতে দেখা যায় আইসিডিতে আমদানি পণ্য নিতে বন্দরে চার্জ ছাড়া রাখার সময় ফ্রি টাইম পার হয়ে যায়। এতে প্রতি কন্টেইনার পিছু চার্জ দিতে হয় আমদানিকারকের। জুলাই-আগস্ট পরিস্থিতিতে বন্দরে জট হ্রাসে ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দর থেকে সরাসরি খালাসের অনুমতি চাওয়া হয়। অনুমতি পাওয়ার পর খালাস হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা এই সুবিধা পাবেন।
বন্দরের পরিবহন বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, শনিবার বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩৫ হাজার ৮০টি (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে)। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ২ হাজার ৯৭৬টি। এ সময় ৩ হাজার ৭২৬টি আমদানি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানো হয়েছে। ৫ হাজার ১৪৬টি কন্টেইনার জাহাজীকরণ করা হয়েছে। মোট ৮ হাজার ৮৭২টি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানো ও জাহাজীকরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর জেটি ও বহির্নোঙর মিলে বর্তমানে জাহাজ আছে ৬৬টি। এর মধ্যে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজ আছে ১০টি। জেনারেল কার্গোর জাহাজ আছে ২৪টি। খাদ্যশস্যের জাহাজ আছে ৮টি। সিমেন্ট ক্লিংকারবাহী জাহাজ আছে ১১টি।
![জট কমাতে শতভাগ পণ্য খালাসে প্রাইভেট আইসিডি'র উদ্যোগ](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)