ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:০৯:৪০ এএম

জরিমানা দিয়ে সারা বছর রিটার্ন জমার সুযোগ

২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৭ এএম

জরিমানা দিয়ে সারা বছর রিটার্ন জমার সুযোগ

ছবি: সংগ্রহ

সারা বছর ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারবেন। তবে সে জন্য ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। সর্বোচ্চ ২৪ মাসের জন্য ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত এই সুদ আরোপিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। রোববার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এ তথ্য জানান এনবিআরের চেয়ারম্যান।

 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়। এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ও অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

 

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ৩১ জানুয়ারির পর অনলাইনে রিটার্ন জমা বন্ধ হয়ে যাবে না। ৩৬৫ দিনই এটা করা যাবে। যারা ৩১ জানুয়ারির পর অনলাইনে রিটার্ন জমা দেবেন, তাদের জন্য হিসাব অন্য রকম হবে। তাদের ব্যয় বাড়বে। ২ শতাংশ হারে অনলাইন রিটার্নে সুদ দিতে হবে।

 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১২ লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এ সংখ্যা ১৫ লাখ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ৩১ জানুয়ারি রিটার্ন জমার সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এ বছর দুই দফা এক মাস করে সময় বাড়ানো হয়েছে। এবার কিছু ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার ধরন পাল্টে অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর এনবিআরের আদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি কর্মকর্তা, তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তাদের অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হলো-ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি। এসব কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনলাইনে রিটার্ন জমা বেড়েছে।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আপনারা কর পরিশোধ করুন। চেয়ার-টেবিলের নিচে দিয়ে আপনাদের কাছে অযৌক্তিক বা বেআইনিভাবে কেউ কিছু দাবি করবে না।

 

অনুষ্ঠানে কাস্টমস কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ, রাজস্ব আহরণে সহায়তা করুন। কিন্তু জোর করে হাত মোচড়িয়ে টাকা-পয়সা আদায় করবেন না।

 

একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেনা পরিশোধ করুন। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, দেনা পরিশোধ করতে এলে কেউ কোনো অযৌক্তিক বা বেআইনি চাহিদা দাবি করবে না। অফিসিয়ালিও কোনো চাহিদা দাবি করা হবে না, আবার টেবিল বা চেয়ারের নিচে দিয়ে যে ধরনের কাজ হয় সেই ধরনের কোনো চাহিদা ও দাবি করা হবে না। অতএব এই দুই বিষয়ে আশ্বস্ত করলে ব্যবসায়ীরা সহায়তা করবেন বলে মনে করি।

 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ মুহূর্তের রাজস্ব আদায় ও ব্যয় দুটোই চ্যালেঞ্জিং। আয় করে নির্বিচারে ব্যয় করব সেটা মোটেও ঠিক হবে না। যৌক্তিক ব্যয় করতে হবে।

 

অর্থনৈতিক সংস্কারে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন খাতের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি আর্থিক খাতের সংস্কার করা। অর্থনৈতিক সংস্কার কঠিন, কারণ অনেক আইন-কানুন আছে, সেগুলো সংশোধন করতে হবে। তবে সংস্কার সহজও বটে। সংস্কার করতে সময় লাগবে। কিন্তু যেসব আইন বা প্রক্রিয়া রয়েছে, সেগুলোর যথাযথ, সঠিক ও স্বচ্ছভাবে ব্যবহার করাই সবচেয়ে বড় কথা। এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা কঠিন কিছু নয়। সিস্টেম আছে কিন্তু এর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।

 

জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে তা স্বীকার করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে এমন আলোচনা হয় মনে হবে যে বাংলাদেশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশই নেই মনে হয়। এই হচ্ছে না, ওই হচ্ছে না। আলুর দাম কমে গেছে, পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। চালের দাম বেড়ে গেছে।এমনভাবে বলা হয় যেন চালের দাম এক হাজার টাকা কেজি হয়ে গেছে। সব জিনিসের দাম একসঙ্গে কমে গেছে তা পৃথিবীর কোথাও দেখা যায়নি। আবার সব জিনিসের দাম একেবারে বেড়ে যাবে তাও আশা করি না। তবে এটা ঠিক যে মানুষের কিছু কষ্ট হচ্ছে। অনেকের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে অনেক জিনিস থাকছে না। তবে সরকার চেষ্টা করছে।

 

শুধু সমালোচনা নয় প্রশংসা পাওয়ারও দাবি রাখে সরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এখন অনেকটা শিশুর মতো। শিশুকে উৎসাহ দিলে শিশু ভালো করে। কিন্তু নিরুৎসাহিত করলে আরও ভেঙে পড়ে। ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো নিয়ে অনেজ কথা হচ্ছে। কিন্তু কেন বাড়ানো হলো ভেতরের সেই খবর সরকারের বলা সম্ভব হয় না। অতএব খারাপ কাজের ভর্ৎসনা করার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও করা দরকার। তবে যারা ক্রিটিক্যাল মনের তারা, সব জায়গায়ই খুঁত খোঁজেন।

 

এ সময় তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত এবং প্রক্রিয়ার দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। সময় বেশি নেই। আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে হবে।

 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকেন। ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়ানোর আগে বা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যবসায়ীদের মতামত নিলে ভালো হয়। ব্যবসায়ীদের সুযোগ থাকলে তারা কর আদায়ে অংশীদার হতে পারবে।

 

অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এনবিআর ১৬ জন কর্মকর্তাকে সার্টিফিকেট অব মেরিট সম্মাননা দেয়।

জরিমানা দিয়ে সারা বছর রিটার্ন জমার সুযোগ