এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে জুনের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাজেট সহায়তা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, এই ঋণ গ্রহণের জন্য সরকারের ব্যাংকখাত সংস্কারসহ বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যা ও তাদের কার্যকাল কমানো।

আরও পড়ুন

জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার

এডিবির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক টাকেও কোনিশির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ঢাকায় এসে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে এডিবি প্রতিনিধিরা জানান, তারা নীতিনির্ভর কর্মসূচির জন্য স্বল্প সুদে তহবিল সরবরাহ করতে পারবে এবং এই অর্থ জুনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই ঋণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে, তবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া সহজ নয়। তাদের শর্ত থাকে, আমরা সেই ঋণই নেবো যেখানে সুদ কম থাকবে।”

এডিবি ব্যাংকখাত সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। তবে এর জন্য ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে করা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনীগুলো বাতিল করতে হবে, যেগুলো আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক মালিকদের চাপে তৈরি করা হয়েছিল।

এডিবি আরও ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য ঋণ দিতে পারে, তবে এর জন্য অন্তত ১৬টি শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো পৌরসভাগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২৬-২০৩৫ সাল মেয়াদী জাতীয় কৌশল অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন। এছাড়া, ২০২৫-২০৪১ মেয়াদী পরিবহন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে এমআরটি, উন্নত বাস সার্ভিস ও অন্যান্য পরিবহন সুবিধার মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এডিবি আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন ‘দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকি তথ্য প্ল্যাটফর্ম’ চালু করা, যা ৫০০ উপজেলার মধ্যে অন্তত ২৫০টিকে সংযুক্ত করবে। এর মাধ্যমে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের ঝুঁকি নিরূপণ ও সরকারি প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়কে ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’র অন্তত ২০ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে, যার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি করা হবে।

এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে কৃষকদের জন্য আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ২০২৫ সালের মধ্যে 'জাতীয় নগর উন্নয়ন নীতি' অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, যার আওতায় পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নগর জলাভূমির সংরক্ষণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এডিবির এই ঋণ ও শর্তগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ, তবে শর্ত পূরণের জন্য সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।