ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২৯:০২ পিএম

জুন শেষে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৮:৫৫ এএম

জুন শেষে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

ছবি: সংগ্রহীত

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি হয়ে পড়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই এখন খেলাপি। গত ডিসেম্বর শেষেও খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা ছিল। সে হিসাবে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোয় ৬৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বাড়ল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল খেলাপি ঋণের এ তথ্য জানানো হয়।


দেশের ব্যাংক খাতের বিদ্যমান খেলাপি ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই গত দেড় দশকে সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের বছর দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। অর্থাৎ শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগেই দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।


তবে খেলাপি ঋণের এ স্থিতিই ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র নয়। গত দেড় দশকে পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন, অবলোপনসহ বিভিন্ন নীতিমালার উদারীকরণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। আবার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ‘মালিকানায়’ থাকা ব্যাংকগুলোকে অবাধে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ দেয়া হয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোয় যথাযথ নিরীক্ষাও করা হয়নি। ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ব্যাংক খাত থেকে নেয়া বেনামি ঋণ, পুনঃতফসিলকৃত ও অবলোপনকৃত ঋণসহ আদায় হবে না, এমন ঋণের পরিমাণ অন্তত ৭ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া এ ঋণের বড় অংশই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। গভর্নর হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর এরই মধ্যে ১০টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছেন। আরো পাঁচ-সাতটি ব্যাংকের পর্ষদ দ্রুতই ভেঙে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত এসব ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র সামনে এলে দেশের অনেক ব্যাংকই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির খাতায় উঠেছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ঋণ। সে হিসাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। এ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশই এখন খেলাপি। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ স্থিতি ছিল ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বিদেশী ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ২২৯ কোটি এবং সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭৪ ও ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

 

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ ঋণ চুক্তির শর্তের মধ্যে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন ফেরানোর বিষয়টিও রয়েছে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশের ব্যাংক খাত উল্টো পথেই হেঁটেছে।

 

 

দেশের ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, নীতি ছাড়সহ নানা অনৈতিক সুবিধায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা এখন ব্যাংকে টাকা ফেরত দিতে তেমন উৎসাহী নন। খারাপ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভালো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও ঋণের কিস্তি আদায় সম্ভব হচ্ছিল না। এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এখন ওই ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

জুন শেষে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে