ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৩৯:০৬ পিএম

জুলাই-সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বাড়ায় ঘাটতি কমেছে ৯৩ শতাংশ

৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ৩:৩১ পিএম

জুলাই-সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বাড়ায় ঘাটতি কমেছে ৯৩ শতাংশ

ছবি: সংগ্রহ

ঊর্ধ্বমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর ভর করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের ব্যালান্স অভ পেমেন্টের (বিওপি) অন্যতম উপাদান চলতি হিসাবের ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৩ শতাংশ কমে এসেছে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২৭ মিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১.৮৩ বিলিয়ন ডলার।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেমিট্যান্স অনেক বাড়তে শুরু করেছে। চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এটিই বড় ভূমিকা পালন করেছে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭.০৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের এই তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন মাসে রেমিট্যান্স ২.১৩ বিলিয়ন ডলার বা ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

 

এই ধারাবাহিকতায় রেমিট্যান্স আসতে থাকলে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি আসতে পারে মন্তব্য করে মইনুল ইসলাম বলেন, এভাবে রেমিট্যান্স বাড়লে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ধীরে ধীরে আবার উদ্বৃত্তে চলে আসবে।

 

 

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫.০১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ এবং আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৯ শতাংশ।

 

মইনুল ইসলাম বলেন, 'আমদানি করার ক্ষেত্রে আমাদের এখন নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে ওভারইনভয়েসিং ও আন্ডারইনভয়েসিং আরও বেশি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়। চাহিদা না থাকায় আমদানির আড়ালে টাকা পাচার ইতিমধ্যে কমেছে। সেটিকে আরো কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে ট্রেড ডেফিসিট আরও কমে আসবে।'

 

তিনি৷ আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত রপ্তানি খুব বেশি বাড়ানো কঠিন। আগের সরকার তাদের সাফল্য প্রচারের জন্য রপ্তানি নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছে, বাড়িয়ে দেখিয়েছে।

 

বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাওয়া একদিক থেকে ভালো হলেও আমদানি খুব বেশি না বাড়া বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। কারণ আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে যাওয়া।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর শেষে দেশের আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের দাঁড়িয়েছে ৫৬০ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ১.২৩ বিলিন ডলার।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে ১৫ শতাংশ। তবে ট্রেড ক্রেডিট ঘাটতি ৯৯১ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে ১১৪ মিলিয়ন ডলারে চলে এসেছে। অর্থাৎ রপ্তানিকারকেরা তাদের বকেয়া থাকা রপ্তানি আয় দেশে নিয়ে আসতে শুরু করেছেন।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ তাদের নীতি সুদহার কমিয়েছে। ফলে বিদেশি ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য দেশে বিনিয়োগ যে হারে কমিয়ে নিয়ে আসছিল, সে গতি কমেছে। একইসঙ্গে ট্রেড ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছিল, সেটি অল্প হলেও কেটেছে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের ব্যালান্স অভ পেমেন্টের (বিওপি) সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ২.৮৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ঘাটতির পেছনে মূল কারণ 'এরর অ্যান্ড অমিশন'-এর নেগেটিভ ব্যালান্স ২.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময় শেষে ছিল পজিটিভ ১৬২ মিলিয়ন ডলার।

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন টিবিএসকে বলেন, 'এরর অ্যান্ড অমিশনের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে গেছে। এমনও হতে পারে, এর একটা অংশ পাচার হয়ে গেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই ডলারগুলো কোথায় গেল, এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখতে হবে।'

 

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ার আরও সুযোগ রয়ে গেছে। ফলে হুন্ডি কমানোর দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এছাড়া আমাদের এফডিআই এখন অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। বাইরের বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব দেখতে পাচ্ছি। এমনিতে তো আমাদের দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতার মতো সমস্যা আছেই। তবে আমাদের সবার আগের আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা, আস্থা ফেরানোর মতো বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে।'

জুলাই-সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বাড়ায় ঘাটতি কমেছে ৯৩ শতাংশ