ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:৩২:১৯ পিএম

টাকার সংকটে সরকার: কর ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট ব্যবস্থাপনা

১২ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:৪৭ পিএম

টাকার সংকটে সরকার: কর ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট ব্যবস্থাপনা

ছবি: সংগ্রহীত

সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণের বিকল্প উৎস খুঁজছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে বাড়তি ভ্যাট দিতে হচ্ছে।

 

 

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণকে এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করাই সরকারের লক্ষ্য। তবে ব্যাংক খাতের দুর্বল পরিস্থিতি এবং বিদেশি সহায়তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না পাওয়ায় অর্থের সংকট এখনো কাটেনি।

 

 

সরকারি ব্যয় গত কয়েক বছরে বহুগুণ বেড়েছে। বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ, এবং মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত খরচ ব্যাপক বেড়েছে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের সিংহভাগই পরিচালন ব্যয়ে ব্যয় হচ্ছে, যা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে প্রভাবিত করছে।

 

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রথম পাঁচ মাসে ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় না হওয়া বাজেট বাস্তবায়নের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের জন্য সরকার ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়েছে। ফলে টিস্যু পেপার, মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস এবং মুঠোফোন সেবার মতো পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন ভ্যাট ব্যবস্থায় বাজেটের বাকি ছয় মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের আশা করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়াবে।

 

 

সঞ্চয়পত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় মুনাফার হার ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ঘরোয়া উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

 

 

সরকার বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ১৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বিদেশি ঋণ সহায়তা দ্রুত ছাড় করানো না গেলে সংকট আরও প্রকট হবে।

 

 

সরকার পরিচালন ব্যয় কমাতে না পারায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বাজেট কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

 

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেছেন, বাজেট ঘাটতি কাটাতে দাতাদের কাছ থেকে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করা এবং সরকারি ব্যয়ের অপচয় বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পরিচালন খরচ নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।

 

 

সরকারের চলমান অর্থসংকট রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, ঋণ শোধের বোঝা, এবং মূল্যস্ফীতিজনিত ব্যয়ের চাপ তৈরি করেছে। কর বৃদ্ধি এবং ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।

টাকার সংকটে সরকার: কর ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট ব্যবস্থাপনা