ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৫২:৫৩ এএম

ডলারের ওপর চাপ কমাতে দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা

২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬:৪০ এএম

ডলারের ওপর চাপ কমাতে দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা

ছবি: সংগ্রহ

টাকার মূল্য যখন বেশ কমে যায় অথবা অন্য মুদ্রার কাছে টাকা যখন ধরাশায়ী হয় তখনই বোঝা যায় দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা কতটা! গত ১৯ নভেম্বর সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থনীতির দুরবস্থার কথা জানালেন।

 

দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ! লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে পর্যুদস্ত করে রেখে যাওয়া দেশের সকল খাতের কথাই বললেন তিনি। ব্যাংক খাতের দুরবস্থার কথা বলেছেন বিশেষভাবে। তবে কোনো ব্যাংক বন্ধ করা হবে না, জানালেন সেটাও।

 

 কিন্তু দেশের অতি দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে দুঃচিন্তা কমছেই না। কদিন আগে তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ও ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় দেশের ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার করেছেন।

 

১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ দেশের আলোচিত একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ এনেছে ২ মাস আগে।

 


অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে ব্যাংকিং খাত, যা বেশ নড়বড়ে অনেকদিন থেকেই। অর্থপাচার, রফতানি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং দেশের আমদানিনির্ভর অর্থনীতি এর মূল কারণ। এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে বারবার।

 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে দ্বিপাক্ষিক মুদ্রার ব্যাপক ব্যবহারের এখন সময়ের দাবি। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ডলারের পাশাপাশি রুপিতেও বাণিজ্য চলছে। দুই দেশের বাণিজ্যে টাকা-রুপিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নিজস্ব মুদ্রায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দর বাড়ছেই আর দরপতন হচ্ছে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মুদ্রার। বছরখানেক আগে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ভারতীয় মুদ্রা রুপিকে নতুন গুরুত্বে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। নিজস্ব মুদ্রাকে শক্তিশালী করার বিষয়ে রাশিয়ার উদাহরণটিকে অনুসরণ করতে চায় ভারত।

 

রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাশিয়া। তখন বিকল্প পথ বের করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন ঘোষণা করেন, ইউরোপের দেশগুলো যদি রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে চায়, তাহলে ইউরো বা ডলার দিলে হবে না, দিতে হবে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল। পুতিনের কাছে হিসাব ছিল পরিষ্কার। সেটা হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে রাশিয়া থেকে। এ দাওয়াই কাজে দেয় এবং রুবলের মান বাড়তে থাকে। মার্কিন ডলারের আধিপত্যের বাইরে ভারতও রাশিয়ার পথ অনুসরণ করছে।

 

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উদ্যোগের পেছনে চারটি কারণ নিহিত। প্রথমত, ডলার সংকটে রয়েছে দেশ দুটি। ফলে উভয়েই এতে লাভবান হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের দুবার মুদ্রা বিনিময় করার খরচ কমেছে। তৃতীয়ত, লেনদেন নিষ্পত্তিতে সময় বাঁচে। চতুর্থত, অন্য উদ্বৃত্ত মুদ্রা রুপিতে রূপান্তর করে লেনদেন নিষ্পত্তিতে ব্যবহার করা যায়।

ডলারের ওপর চাপ কমাতে দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা