ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ডলারের দাম বৃদ্ধিতে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে শঙ্কা
৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৭ এএম
![ডলারের দাম বৃদ্ধিতে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে শঙ্কা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/01/05/20250105093257_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
রমজান মাসের আগেই নতুন করে ডলারের দাম বৃদ্ধি পণ্যের দাম বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানিকারকদের বাড়তি দামে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে হচ্ছে, ফলে আসন্ন রমজানে পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ভোজ্য তেলের সংকট এবং ছোলার সরবরাহে জটিলতা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভোগ্য পণ্য আমদানি ৩ শতাংশ কমেছে। এলসি খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫৭ কোটি ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। এছাড়া, এলসি নিষ্পত্তি কমে ১৩ শতাংশেরও বেশি। এই কম আমদানি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব আগামী রমজান মাসে বাজারে অনুভূত হতে পারে।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা, যা এখন ১২২ টাকায় পৌঁছেছে। খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে ১২৬-১২৭ টাকা খরচ হচ্ছে, যা আমদানিকারকদের জন্য একটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন তারা উচ্চমূল্যে ডলার কিনে এলসি খুলছেন, ফলে আমদানির খরচ বাড়ছে এবং এর প্রভাব পণ্যের মূল্যেও পড়তে পারে।
বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি এবং দেশের শুল্কনীতি অনুসারে, রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা বেশ কিছু পণ্য আমদানি করেছেন। তবে তারা আশাবাদী, ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে দাম খুব বেশি বাড়বে না। তবে, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পূর্বাভাস অনুযায়ী, পণ্যের দাম বৃদ্ধি কমার সম্ভাবনা কম।
রমজান এলসি খোলার সংখ্যা কমে গেছে উপলক্ষে সাধারণত ব্যবসায়ীরা তিন থেকে চার মাস আগে থেকেই পণ্যের মজুদ বাড়ানোর প্রস্তুতি নেন। ছোলা, খেজুর, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়ে এই সময়ে। তবে এবারের রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানির এলসি কমে গেছে। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, খেজুর এবং ফলের জন্য এলসি খোলার ৭৫ শতাংশই সম্পন্ন হয়ে গেছে, তবে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে পণ্যের দাম পূর্বের তুলনায় কিছুটা কমবে।
এদিকে, বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, "এবার ছোলার দাম বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ডলারের দাম বাড়ার কারণে দেশীয় বাজারে ছোলার দামও বেড়েছে। গত বছর পাইকারি বাজারে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ছোলা এ বছর ১১৩-১১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।"
তবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, রমজানে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে। এর ফলে, পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। সম্প্রতি, পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা, ও ডালের দাম কিছুটা কমেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, "রমজানের জন্য সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, ফলে দাম স্থিতিশীল থাকবে।"
এছাড়া, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, তারা রমজান উপলক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যে খেজুর, ছোলা, চিনি, সয়াবিন তেল ও ডাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করবে। এর মাধ্যমে, বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো হবে এবং দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, "বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের বাজারে ততটা পরবে না।" তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমে আসায়, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বেশ সীমিত হবে।"
এখন পর্যন্ত রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি কম হলেও ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে, সরকারি উদ্যোগ এবং বাজারের চাহিদা মেটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে দ্রব্যমূল্য অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, এবং বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির উপরও পণ্যের দাম নির্ভর করবে।
- ট্যাগ সমূহঃ
- রমজানে
- নিত্যপণ্যের
- বাজার
- শঙ্কা
![ডলারের দাম বৃদ্ধিতে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে শঙ্কা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)