ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:০৬:০৭ পিএম

ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে পার্থক্য ১ টাকা না মানলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:৩৮ এএম

ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে পার্থক্য ১ টাকা না মানলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি: সংগ্রহ

ডলার দামের কারসাজি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলার ক্রয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাম দেয়া যাবে না। পাশাপাশি ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের পার্থক্য হবে সর্বোচ্চ এক টাকা। যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করে তাহলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। তবে লেনদেনের পরিমাণ যদি বেশি হয়, তাহলে পুরো লেনদেনের পাঁচ শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে।

 

গতকাল সোমবার ২৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ট্রেজারিপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে কঠোর এই নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

ডলারের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া ক্রলিং পেগের মধ্যম রেট দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ১১৭ টাকা থেকে ১১৯ টাকায় উন্নীত করা হলো ক্রলিং পেগের মিড রেট। বিদেশি রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ যুক্ত করা যাবে। বিক্রির সময় আরও এক শতাংশ যুক্ত করে মুনাফা নিতে পারবে ব্যাংক। এর বাইরে না যাওয়ার কড়া নির্দেশনা দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
জানা যায়, বৈঠকে ডলার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, মার্কেটের উন্নতি, ডলারের মিট রেট এবং সঠিক তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে আলোচনা হয়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন ট্রেজারিপ্রধান বলেন, ‘গভর্নর জানিয়েছেন, ডলারের দুটো রেট হবে। একটি ক্রয় অপরটি বিক্রয়। ক্রয় ও বিক্রয়ের মধ্যে পার্থক্য হবে সর্বোচ্চ এক টাকা। কোনো ব্যাংক এই নিয়ম অমান্য করলে তাকে ১০ লাখ টাকার বেশি জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি ট্রানজেকশনের পরিমাণ যদি অনেক বেশি হয় তাহলে পুরো ট্রানজেকশনের পাঁচ শতাংশে হারে জরিমান করা হবে।’

 

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের একটি রেফারেন্স রেট চালু করবে। এর মাধ্যমে ডলারের মিট রেট ঠিক করা হবে। তবে সেটা কীভাবে হবে বিস্তারিত জানায়নি। এ নিয়ে মঙ্গলবার একটি সার্কুলার করার কথা বলেছে।’ বৈঠকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে ব্যাংকগুলোর সব ডলারের লেনদেন রিপোর্ট করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর ডলারের গড় লেনদেন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এছাড়া তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি ডিজিটাল পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান গভর্নর। একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘গভর্নর বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে মার্কেট উন্নতি করার জন্য ডলারের একটি ফান্ড তৈরির কথা বলেন, যাতে সংকটে এ ফান্ড ব্যাংকগুলো ব্যবহার করতে পারে।’

 

এদিকে রেমিট্যান্স সংগ্রহের ক্ষেত্রে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা দেয়া যাবে। বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দরে এই সীমা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তঃমুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে গণনা করা হার এই সীমা ছাড়াতে পারবে না বলে গতকাল সোমবার নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটিসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত ডলারের চাহিদা বাড়ার কারণেই এই অস্থিরতা দেখা দেয়। ডলারের দর বাড়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

 

রেমিট্যান্স সংগ্রহে বিনিময় হারের সীমা আরোপ করা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ঘনিষ্ঠভাবে তদারকি করতে একটি ড্যাশবোর্ড বাস্তবায়ন করবে। এটি বিনিময়দরের আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে।

 

ডলারের দামে সম্প্রতি অস্থিরতা বিরাজ করার পেছনে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এর একটি বড় কারণ হলো অর্থবছর শেষে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়া। ডিসেম্বরে প্রায়ই ঋণ পরিশোধ ও অন্যান্য আর্থিক বাধ্যবাধকতা বেড়ে যায়, যা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। আইএমএফের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক ডলার বিক্রির স্থগিতাদেশ এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের সরবরাহ সীমিত হয়েছে। এতেই চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়েছে।

ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে পার্থক্য ১ টাকা না মানলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা