ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:২০:১৭ পিএম

তদারকির অভাবে মানহীন-নকল পণ্যে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

১১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬:৪৮ এএম

তদারকির অভাবে মানহীন-নকল পণ্যে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি: সংগ্রহ

মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ায় প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার বাড়ার সুযোগে ভেজাল, নকল, মানহীন, অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী সামগ্রীতে ভরে গেছে বাজার।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি-বিদেশি বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর মোড়ক নকল করে, তা বাজারজাত করা হচ্ছে। অপরদিকে অবৈধ পথেও দেশে আসছে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী। নকল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তদারকির যথেষ্ট অভাব আছে। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য।

 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, যে পণ্যগুলো কাস্টমসের মাধ্যমে দেশে আসে সেগুলো ছাড়া বিদেশ থেকে আসা বেশির ভাগ পণ্যই ভেজাল, মেয়াদোর্ত্তীর্ণ এবং নিম্নমানের। ব্র্যান্ডের কোনো পণ্যের নামের বানান একটু এদিক সেদিক করে হুবহু নকল করা হয়। ব্যাবহার করার পর খালি কৌটা সংগ্রহ করে তাতে ডুকিয়ে দেয়া হয় ভেজাল পণ্য। এসব পণ্য ব্যাবহারের ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।

 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আসা বেশির ভাগ কসমেটিকস পণ্যই চোরাই পথে বা ‘লাগেজে’ আনা হয়। এসব পণ্য অত্যন্ত নিম্নমানের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব পণ্য ব্যবহারের ফলে ত্বক নষ্ট ও ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ হচ্ছে।

 

নকল প্রসাধনী ব্যাবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে ডক্টর হক স্কিন ক্লিনিকের ডা. শারমীন হক বলেন, মানহীন ভেজাল পণ্য ব্যাবহারের ফলে ত্বকের বহুবিধ ক্ষতি হতে পারে। ত্বক স্থায়ীভাবে পুড়ে যায়, যা আর আগের অবস্থানে আর ফিরে আসে না। স্ট্ররয়েড বেইজড ক্রিমে মেয়েদের মুখে লোম ও ব্রণের সংখ্যাও বেড়ে যায়।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নামীদামি কোম্পানির ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো বেশি নকল হয়। নকল ও মানহীন পণ্য ব্যবহারের ফলে মানুষের স্কিন ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রঙ ফর্সাকারী ভেজাল ক্রিমের মধ্যে অতিমাত্রায় হাইড্রোকুইনোন, মার্কারি (পারদ), ক্রোমিয়াম, লেড পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন এসব ক্রিম ব্যবহার করলে চর্মরোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।

 

হাইড্রোকুইনোন এর ক্ষতি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমইউ) সাবেক উপ-উপাচার্য এবং চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ শিকদার বলেন, হাইড্রোকুইনোন একটা সময় পর্যন্ত কাজ করে। ডায়াগনসিস কনফার্ম করে নির্দিষ্টভাবে স্থানেই এটা লাগাতে হবে। হাইড্রোকুইনোন দিনে লাগানো যাবে না, শুধুমাত্র রাতে লাগাতে হবে। দিনে ব্যবহার করলে সূর্যের আলোর সাথে বিক্রিয়া করে দাগ তৈরি করবে। দীর্ঘমেয়াদি এটা ব্যবহার করলে দাগ ভালো হয়ে আবার দাগ সৃষ্টি করে। মাত্রা বেশি হলেও ক্ষতি হবে।

 

বিএসএমইউয়ের একই বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ডা. বলেন, নকল ভেজাল মানহীন কসমেটিকস পণ্য ব্যাবহার করলে একজিমা হতে পারে। একজিমা হলে মুখে কালো দাগ বাড়তে পারে। এর ফলে ক্ষত এবং দাগ দীর্ঘদীন থেকে যেতে পারে। এছাড়াও মুখের স্বাভাবিক লাবণ্য এবং কমনীয়তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মুখের কোথাও বেশি সাদা কোথাও বেশি কালো হতে পারে।

 

বাংলাদেশের মার্কেটে দেশি বিদেশি কসমেটিকসের কত শতাংশ মান নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) উইংয়ের পরিচালক বলেন, যেসব কসমেটিকস পণ্য বিদেশ থেকে বৈধপথে দেশে আসে, সেগুলো বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা ছাড়া ঢোকার সুযোগ নাই। তবে যেসব পণ্য লাগেজে বা অবৈধভাবে চোরাই পথে আসে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন।

 

দেশের নকল পণ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের নকল কসমেটিকস পণ্যের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছি। দেশে নামীদামি কোম্পানির প্যাকেট বা লেভেল নকল করে সেগুলোও আমরা ধরছি। যখনি আমরা কোনো তথ্য পাই, দ্রুতই একশনে চলে যাই। নকল ভেজাল পণ্য আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সিজ করে ধ্বংস করে দিচ্ছি, কারখানা সিলগালা করছি, জেল জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

নকল ভেজাল এবং মানহীন প্রসাধনী উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে সরকারের যেমন কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে, তেমনি ভোক্তাদেরকেও চটকদার কোন বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে পণ্য কেনা থেকে বিরত থেকে, যাচাই বাছাই করে মানসম্মত পণ্য ক্রয় করে ব্যাবহার করার পরামর্শ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

তদারকির অভাবে মানহীন-নকল পণ্যে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি