ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:৪৩:২৭ এএম

তীব্র গ্যাস সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগ

৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:২৫ এএম

তীব্র গ্যাস সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগ

ছবি: সংগ্রহ

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র গ্যাস সংকট চলছে, যা বিশেষভাবে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য শহরগুলোতে তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন—সব জায়গায় গ্যাসের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এই সংকটের কারণে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না, আর এর ফলে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষোভ।

 

 

পেট্রোবাংলা জানায়, শীতকালের জন্য সাধারণত গ্যাস সংকট তৈরি হয়, তবে এবারের সংকট আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। একটি এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বন্ধ থাকায় সরবরাহ কমেছে, যা সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি বন্ধ থাকায়, অপরটি চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। এর ফলে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে।

 

 

এর পাশাপাশি, পাইপলাইনে জমে থাকা কনডেন্সড গ্যাসের কারণে গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা সংকটের আরও একটি বড় কারণ।

 


রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে গ্যাসের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গ্রিনরোড, মহাখালী, আদাবর, মৌচাক, নাজিরাবাজার, ধলপুর, কাঁঠালবাগান, মগবাজার, কল্যাণপুর ও মিরপুরের মতো এলাকাগুলোতে গ্যাসের স্বল্প চাপ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সকাল ৭টার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় সব এলাকায় গ্যাসের সঞ্চালন কম থাকছে, ফলে বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন, শিল্পকারখানা—সবখানেই ভোগান্তি বেড়েছে।

 

 

অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে মাটির চুলায় রান্না করছেন, কিছু পরিবার এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। এমনকি গ্যাসের চাপ না থাকার কারণে সিএনজি স্টেশনগুলোতে গাড়ি ভরতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট, এবং পরিবহন সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে।

 

 


গ্যাস সংকটের কারণে সারা দেশে শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। গাজীপুরের একটি কম্পোজিট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০-৪০ শতাংশ কমে গেছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে এবং পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে, যার ফলে ব্যবসায়ীরা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন।

 


রাজধানীর মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বনশ্রী, রামপুরা, মগবাজার, সেগুনবাগিচা, পুরান ঢাকা ও অন্যান্য এলাকায় গ্যাসের প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বাসিন্দা গ্যাসের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন, আবার কেউ কেউ রাত ১১টার পরে গ্যাসের চাপ বাড়লে রান্নার কাজ সারছেন। অনেক বাড়িতে ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করতে হচ্ছে, যা সাধারণত গ্যাসের তুলনায় অনেক বেশি খরচের।

 

 

মোহাম্মদপুরের মিজানুর রহমান জানান, "প্রতি বছর শীতকালে গ্যাস সংকট হয়, তবে এবারের অবস্থা আগের তুলনায় আরও খারাপ। গ্যাসের জন্য ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।"

 

 


ঢাকা শহরের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও পরিস্থিতি একই রকম। গ্যাসের কম চাপের কারণে ফিলিং স্টেশনগুলোতে গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। সিএনজি চালকরা জানান, গ্যাস নেয়ার জন্য ২-৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে তারা যথাসময়ে যাত্রী পরিবহন করতে পারছেন না, যা ব্যবসায়িক দিক থেকে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

 


বস্ত্রকল, সিরামিক এবং ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে বড় ধরনের লোকসানে পড়ছে শিল্পকারখানাগুলো। শিল্প মালিকরা আশঙ্কা করছেন, গ্যাস সংকট অব্যাহত থাকলে এই খাতে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসবে, যার প্রভাব পড়বে রপ্তানি বাণিজ্য এবং জাতীয় রিজার্ভের উপর।

 


তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শীতকালীন সঞ্চালন লাইনের সমস্যার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে, তবে শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তারা আশা প্রকাশ করেছে যে, ঠান্ডা কমে গেলে গ্যাস সরবরাহে উন্নতি হবে, তবে সামগ্রিক সংকট কাটাতে না পারলে সেবার মান উন্নত হবে না।

 

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পাইপলাইনে গ্যাস প্রবাহ পুনরায় স্বাভাবিক করতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় এই সংকট দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে আরও বড় সংকট তৈরি হবে।

 

 

এভাবে, দেশে তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। সরকার যদি দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামী দিনে দেশের শিল্প, অর্থনীতি এবং সাধারণ জনগণের জন্য এই সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

তীব্র গ্যাস সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগ