ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:২৫:৫৩ পিএম

তীব্র শীতে করুণ মৃত্যু গাজার শিশুদের

৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭:০ পিএম

তীব্র শীতে করুণ মৃত্যু গাজার শিশুদের

ছবি: সংগ্রহ

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শীতের তীব্রতা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় একের পর এক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। ছোট ছোট শিশুগুলোর মুখে ঠিকমতো খাবারও উঠছে না যে উত্তাপ উৎপন্ন করবে শরীর। পাশাপাশি মাথা গোজার ঠাঁইও নেই বেশিরভাগ পরিবারের। চিকিৎসার জন্য আস্ত নেই একটাও হাসপাতাল। ফলশ্রুতিতে হাইপোথার্মিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে প্রাণ যাচ্ছে দুধের শিশুদেরও। বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, সোমবার সকালে আল-আকসা শহিদ হাসপাতালে এক মাস বয়সের শিশু আলি আল-বাত্রান মারা গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তীব্র শীতই তার মৃত্যুর কারণ।

 

এর মাত্র এক দিন আগে একই কারণে আলি আল-বাত্রানের যমজ ভাই, জুমা আল-বাত্রান মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি আশ্রয়শিবিরে মারা যায়। এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

 

গাজা সরকারের তথ্য অফিস জানিয়েছে, বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহ ও হিমপ্রবাহের কারণে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়শিবিরগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তথ্য অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা এরই মধ্যে সতর্ক করেছি যে, শীতকালীন ঝড় এবং ভয়াবহ হিমপ্রবাহ (তুষার ঢেউ) বাস্তুচ্যুত মানুষদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর নির্মম আগ্রাসনের ফলে আমাদের মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। কিন্তু এসব আশ্রয়শিবির শীত প্রতিরোধে সম্পূর্ণ অকার্যকর।

 

এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি ইসরাইলকে দায়ী করেছে গাজার প্রশাসন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর আগ্রাসন এবং গণহত্যার কারণে মানবিক পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোও এ হত্যাযজ্ঞে অংশীদার। আমরা এ বর্বরতা বন্ধের আহ্বান জানাই।

 

গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়ার অবনতির কারণে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।

 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৯ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে গাজায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় নিহত মোট ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৪৫ হাজার ৫৪১ জনে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৮ হাজার ৩৩৮ জনে পৌঁছেছে। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। ইসরাইলের অব্যাহত হামলা ও বাধার কারণে উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

 

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরাইলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও এ হামলা অব্যাহত আছে।

 

জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে ভূখণ্ডের ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেই সঙ্গে অঞ্চলটির ৭০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ আরও বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন। গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

 

গাজার হাসপাতালে ইসরাইলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান। গত কয়েক দিনে একটি হাসপাতালে ইসরাইলি হামলা ও আরেকটিতে অভিযান চালানোর প্রেক্ষাপটে সোমবার এ কথা বলেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ডব্লিউএইচওর মহাসচিব তেদরোস আধানোম গেব্রেইসাস বলেছেন, গাজার হাসপাতালগুলো আবারও যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আবারও বলছি, হাসপাতালে হামলা চালানো বন্ধ করতে হবে। গাজাবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজন সেবা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ। তাই তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি করতে হবে।

 

তেদরোস বলেছেন, ডব্লিউএইচও এবং তাদের অংশীদাররা গাজার হাসপাতালে মেডিকেল সাপ্লাই, খাবার ও পানি সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া আল শিফা হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ ১০ জনকে স্থানান্তর করা হয় যাদের চারজনকেই আটক করা হয়েছে। গাজাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইসরাইলকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তীব্র শীতে করুণ মৃত্যু গাজার শিশুদের