ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:১৬:০০ পিএম

দুই দফায়ই হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা

৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৮:০ পিএম

দুই দফায়ই হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা

ছবি: সংগ্রহ

জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ও আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। তবে দুই দফায়ই হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। মুনাফার আশায় বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। আর দেশের পুঁজিবাজার ২০২৪ সাল মন্দায় কেটেছে। এই সময় সূচকের বড় পতন ও বড় অঙ্কের মূলধন হারিয়েছে বাজারটি।

 

ডিএসই তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ছয় হাজার ২৩৩ পয়েন্ট। বছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ ডিসেম্বর সূচক কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২১৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ সূচক কমেছে এক হাজার ৩০ পয়েন্ট বা ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর বছরের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৮০ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যা বছরের শেষ কার্যদিবসে কমে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এতে এক বছরের ব্যবধানে বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় সোয়া এক লাখ কোটি টাকা।

 

২০২৪ সালের জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আশার আলো দেখেন বিনিয়োগকারীরা, কিন্তু আশাহত হন বিনিয়োগকারীরা। কৃত্রিমভাবে পতন ঠেকাতে টানা দেড় বছর পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বাজারকে রুগ্ণ করে তোলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জাতীয় নির্বাচন শেষে কয়েক ধাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফ্লোর প্রাইস উঠে গেলে বাজারের ভঙ্গুর দৃশ্য আরও প্রকট হয়, ধস নামে অধিকাংশ শেয়ারে।


জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যেমে আগস্টে পতন ঘটে আওয়ামী সরকারের। দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএসইসির শীর্ষ পদে বদল আনা হয়েছে। বিদায় নেয় শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে বিএসইসির নতুন কমিশন গঠিত হয়। ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পর্ষদও পরিবর্তন আনা হয়। নতুন কমিশন বিগত বছরগুলোয় ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭২২ কোটি টাকার জরিমানা করেছে। এছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বেনামি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির এমডি, আলোচিত শেয়ার কারসাজির হোতাদের বড় অঙ্কের জরিমানা করে।

 

পুঁজিবাজার উন্নয়নে পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। ব্যাংকঋণের বদলে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে সরকারের নীতি প্রণয়ন এবং এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করাসহ টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭টি। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে টাস্কফোর্স তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন কমিশনে হস্তান্তর করবে।

 

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারীরা নতুন করে আশার আলো দেখে। বাজারে চাঙা হয়ে ওঠে, তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ কমায় পুঁজিবাজারে লেনদেন কমছে। গত সপ্তাহে প্রধান পুঁজিাবাজার ডিএসইতে টাকার অঙ্কে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকার নিচে নামে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালে সর্বনি¤œ। আর গত ২৮ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচক কমে চার হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে নেমে আসে, যা ছিল চার বছরের মধ্যে নি¤œতম। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পর্যায়ে চলে আসেন বিনিয়োগকারীরা, যা ঠেকাতে পারেনি নতুন কমিশন।

 

আগের বছরের মতো বিদায়ী বছরে আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) খরা ছিল। এ বছর ছয়টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে ৬৫৫ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে এনআরবি ব্যাংক ১০০ কোটি, বেস্ট হোল্ডিং ৩৫০ কোটি টাকা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ৯৫ কোটি, টেকনো ড্রাগস ১০০ কোটি টাকা, ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ পাঁচ কোটি এবং ওয়েব কোটস পাঁচ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। আর বন্ড ছেড়ে সাউথইস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি এবং ইউনাইটেড কমার্র্শিয়াল ব্যাংক ৩০০ কোটি মূলধন সংগ্রহ করেছে। মোট তোলা হয়েছে এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছিল এক হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। নতুন কমিশন বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।

 

তবে বাজারের স্বার্থে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশন। কারসাজির অভিযোগে কারও কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। পাশাপাশি টাস্কফোর্সের কাজ চলমান। এখন বিনিয়োগকারীরা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন ২০২৫ সালের দিকে। আগামী বছরে ভালো কিছু দেখার প্রত্যাশা তাদের।

দুই দফায়ই হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা