ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধন কমছে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩০ পিএম
![দেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধন কমছে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/13/20241213144208_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
একদিকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি, অন্যদিকে উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল অনুমোদনের ইস্যুতে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় দুই চাকার বাহনটি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অবশ্য বলছে, টানা তিন বছর ধরে দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি ও নিবন্ধন নেয়ার হার কমছে। ২০২৩ সালে বিআরটিএ থেকে ৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়, যা ২০১৬ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন। আর চলতি বছরের ১১ মাসে নিবন্ধন হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৮টি মোটরসাইকেলের।
বাজারের এ খারাপ অবস্থার মধ্যেও সাম্প্রতিক সময়ে আসা ভারতীয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল রয়্যাল এনফিল্ড নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ। বাংলাদেশে বাজারজাতের জন্য গত ২১ অক্টোবর থেকে রয়্যাল এনফিল্ড প্রি-বুকিং শুরু করেছে বিপণনকারী কোম্পানি ইফাদ মোটরস লিমিটেড। কোম্পানিটির তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার ইউনিট মোটরসাইকেলের অগ্রিম অর্ডার হয়েছে।
রয়্যাল এনফিল্ড নিয়ে মোটরসাইকেল প্রেমীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংখ্যাগত দিক দিয়ে চলতি বছর দুই চাকার এ বাহন বিক্রি গত বছরের চেয়েও খারাপ অবস্থায়। তবে ‘ভ্যালু’র হিসাবে বাজারে এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রানার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মার্কেট কমে যাচ্ছে এটা ঠিক। তবে মার্কেট ভ্যালু ড্রিভেন হচ্ছে। যেগুলোর বেশি দাম, সেগুলোর মার্কেট ভালো করছে। আগে যেটা ছিল, বটম অব দ্য পিরামিড যদি বলেন, তাহলে নিচের দিক থেকে চাহিদা কমছে, ওপরের দিকে ডিমান্ড বাড়ছে। এ কারণে বাজারে ভলিউম কম হলেও ভ্যালু বেশি।’
এর বাইরে মোটরসাইকেলের বাজার সাম্প্রতিক সময়ে খারাপ হওয়ার জন্য অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও প্রভাব রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক্সটারনাল একটা ফ্যাক্টর আছে। সিচুয়েশন ভালো থাকলেই মানুষ মোটরসাইকেল বা দামি ইলেকট্রনিকস কেনে। সিচুয়েশন খারাপ থাকলে অপেক্ষা করে। বর্তমানে এ ধরনের একটা প্রভাব তো আছেই।’
দেশে মোটরসাইকেলের বাজার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায় বিআরটিএ থেকে প্রকাশিত সারা দেশে বছরভিত্তিক যানবাহন নিবন্ধনের তথ্যে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯১২টি। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ১০ হাজার ৪১৮-তে। আর চলতি বছরের ১১ মাসে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৮টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন দিয়েছে বিআরটিএ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান যদিও বলছেন, ‘২০২২ সালের দিকে রাইডশেয়ারের জনপ্রিয়তার কারণে মোটরসাইকেল বিক্রি ও নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল বেশি। পরবর্তী সময়ে রাইডশেয়ারের চাহিদা কমে যাওয়া এবং বিকল্প হিসেবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক যানবাহনের কারণে মোটরসাইকেলের চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর পেছনে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি চাহিদা কমে যাওয়াও সমানভাবে দায়ী। তবে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন কমলেও বাংলাদেশে বিদ্যমান যানবাহনের বিপরীতে সড়কের সংখ্যা অপ্রতুল। এ অপ্রতুল সড়কে মোটরসাইকেলের মতো ছোট ছোট যানবাহন নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। তাই আমি মনে করি, বাহনটির ওপর নীতিগত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা জরুরি।’
বিআরটিএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর মোটরসাইকেল ছাড়া অন্যান্য যানবাহন নিবন্ধনে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। অটোরিকশা ও বড় বাসের নিবন্ধন কিছুটা কমলেও কার্গো ভ্যান, জিপ, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের নিবন্ধন বেড়েছে।
বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১১ মাসে ৩ হাজার ৯৬৭টি অটোরিকশার নিবন্ধন হয়েছে। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ৯ হাজার ২৫৭। একইভাবে চলতি বছরের ১১ মাসে ১ হাজার ৩৯৫টি বাস বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮০। অন্যদিকে গত বছর যেখানে ৭ হাজার ৭৬৫টি জিপ নিবন্ধন নিয়েছিল, সেখানে চলতি বছরের ১১ মাসেই সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৪তে। গত বছর কার্গো ভ্যান নিবন্ধন নিয়েছিল ১ হাজার ৮৪৭টি। আর চলতি বছরের ১১ মাসে নিবন্ধন নিয়েছে ২ হাজার ৬৫৮টি কার্গো ভ্যান। গত বছর যেখানে ৫ হাজার ৫২টি মাইক্রোবাস নিবন্ধন নিয়েছিল, সেখানে চলতি বছরের ১১ মাসে ৫ হাজার ৩২২টি মাইক্রোবাস নিবন্ধন দিয়েছে বিআরটিএ।
![দেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধন কমছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)