ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:০৩:৩৩ এএম

দেশে ৩২ হাজার গয়নার দোকান ভ্যাট দেয় না

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৪ এএম

দেশে ৩২ হাজার গয়নার দোকান ভ্যাট দেয় না

ছবি: সংগ্রহ

দেশের প্রায় ৩২ হাজার গয়নার দোকান মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) পরিশোধ করে না বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশে মোট ৪০ হাজার গয়নার দোকানের মধ্যে মাত্র আট হাজার দোকান ভ্যাট দেয়। গত অর্থবছরে এসব দোকান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হয়েছে, যা ভ্যাট আদায়ের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

 

 

রাজস্ব বোর্ডের মতে, দেশের ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বর্তমানে বিশ্বে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) দিক থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে ভ্যাট ফাঁকি রোধ ও রাজস্ব আদায়ের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে খুচরা ও পাইকারি দোকানে বিক্রি পর্যবেক্ষণের জন্য ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বা বিক্রয় ডেটা কন্ট্রোলার বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

 

 

বিগত ১৫ বছর ধরে সরকার খুচরা বিক্রেতাদের ভ্যাটের আওতায় আনার জন্য ইলেক্ট্রনিক সেলস রেজিস্টার চালু করার চেষ্টা করছে, তবে এখনও অনেক দোকানে এই যন্ত্র নেই। পরিস্থিতি বদলাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এর ২৩ হাজার সদস্যকে ইএফডি সিস্টেমের আওতায় আনার জন্য রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে, বাজুসের মাধ্যমে গয়নার দোকানে এখন পর্যন্ত মাত্র এক হাজার ইএফডি বসানো সম্ভব হয়েছে।

 

 

বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে তারা গয়নার দোকানগুলোকে ভ্যাট ও করের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। তবে, ইএফডি না থাকায় অনেক দোকানি ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে কম দামে গয়না বিক্রি করছেন, যা ভ্যাট প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করছে।

 

 

রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আবদুর রউফ জানিয়েছেন, গয়নার দোকানগুলোকে ভ্যাটের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং প্রথম পর্যায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব গয়নার দোকানে ইএফডি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুয়েলারি ব্যবসার পাশাপাশি আরও অনেক খাতের ব্যবসায়ী এখনো ভ্যাটের আওতায় আসেননি এবং রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য হচ্ছে এসব খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনা।

 

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গয়নার দোকান থেকে ১০০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় একটি অবাস্তব পরিমাণ এবং প্রকৃত ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়া উচিত। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘রাজস্ব বোর্ড এখনো গয়নার দোকানগুলো থেকে যথাযথ ভ্যাট আদায় করতে পারেনি, যা সরকারের রাজস্ব আদায়ের দুর্বলতার প্রতিফলন।’’

 

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলেও কাঠামোগত সমস্যা এবং মাঠপর্যায়ে রাজস্ব কর্মকর্তাদের উপস্থিতির অভাবের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায় হচ্ছে না।’’

 

 

এদিকে, সিপিডি গবেষণা পরিচালক আরো তাগিদ দিয়েছেন যে, ডিজিটাল মাধ্যমের মাধ্যমে দ্রুত রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে দেশের নিবন্ধিত ভ্যাটদাতার সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ, তবে বিপুল সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও ভ্যাটের আওতায় আসেনি।

 

 

এ সকল উদ্যোগের মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে, দেশের ভ্যাট সংগ্রহ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে।

দেশে ৩২ হাজার গয়নার দোকান ভ্যাট দেয় না