ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
দেশ ছাড়তে চান রেকর্ডসংখ্যক ধনী আমেরিকান
৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ এএম
![দেশ ছাড়তে চান রেকর্ডসংখ্যক ধনী আমেরিকান](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/03/20241103100023_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহীত
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। চলতি সপ্তাহেই শেষ হতে যাচ্ছে সব জল্পনা-কল্পনা। তবে নির্বাচনের সমীকরণ নিয়ে মার্কিন ধনীদের মধ্যে রয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ, যা দেশ ত্যাগ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। মার্কিন অভিবাসন আইনজীবীদের মতে, নির্বাচনকে ঘিরে ধনী আমেরিকানদের বড় একটি অংশ দেশ ছাড়তে চাইছেন। তাদের আশঙ্কা, নির্বাচনে যিনিই জিতুন না কেন রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। খবর সিএনবিসি।
আরও পড়ুন
মার্কিন অভিবাসন আইনজীবী, ফ্যামিলি অফিস নির্বাহী ও পরামর্শকরা জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় পাসপোর্ট গ্রহণ বা দীর্ঘমেয়াদে আবাসনে আগ্রহীদের কাছ থেকে রেকর্ড চাহিদা দেখছেন। ‘নির্বাচনের পর বিদেশ চলে যাওয়ার’ প্রবণতা আগেও দেখা গেছে। তবে এবার পরামর্শকরা বলেছেন, অনেক ধনীই আগেভাগে দেশত্যাগের ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন।
বিত্তবানদের আন্তর্জাতিক অভিবাসনে পরামর্শক দিয়ে থাকে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স। কোম্পানিটির প্রাইভেট ক্লায়েন্ট বিভাগের প্রধান ডমিনিক ভোলেক জানান, বিত্তবানদের অভিবাসনের এত চাহিদা এর আগে তারা কখনো দেখেননি।
তিনি আরো জানান, প্রথমবারের মতো ধনী আমেরিকানরা কোম্পানির সবচেয়ে বড় গ্রাহক, যা ব্যবসার ২০ শতাংশ বা অন্য যেকোনো জাতীয়তার চেয়ে বেশি। বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে এমন আমেরিকানদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক কর ও অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা লেসপারেন্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ডেভিড লেসপারেন্স জানান, বিদেশে যেতে চাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
অভিবাসন বিষয়ে ধনীদের পরামর্শ দেয় আর্টন ক্যাপিটাল। সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ আমেরিকান কোটিপতি দেশ ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন। অল্পবয়সী মিলিয়নেয়াররা দেশ ত্যাগে তুলনামূলক বেশি প্রস্তুত। ১৮-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা বিদেশে রেসিডেন্সি-বাই-ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে গোল্ডেন ভিসা পেতে ‘খুব আগ্রহী’।
অবশ্য কভিড-১৯-এর পর থেকে আমেরিকান ধনীদের মধ্যে দ্বিতীয় পাসপোর্ট বা রেসিডেন্সির প্রতি আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে। কর সুবিধা, সাশ্রয়ী অবসর, ঘনিষ্ঠ পারিবারিক জীবনসহ বিভিন্ন ধরনের অরাজনৈতিক কারণে মার্কিন ধনীরা দেশ ছাড়তে আগ্রহী। এছাড়া একটি দেশের নাগরিকত্বকে ব্যক্তিগত ও আর্থিক ঝুঁকি হিসেবেও দেখেন তারা। দ্বিতীয় দেশ বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনে। এর জন্য অন্য দেশের পাসপোর্ট বিশেষ সুবিধা দেয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনুকূল সম্পর্ক নেই এমন দেশে যাতায়াত বা ব্যবসা সহজ হয়।
পুরনো প্রবণতার বাইরে এবার নির্বাচন ও রাজনৈতিক আবহাওয়া ধনী আমেরিকানদের বিদেশে যাওয়ার চাপ বাড়িয়েছে বলে জানান ডেভিড লেসপারেন্স। তিনি জানান, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তার গ্রাহকরা মূলত করের কারণে বিদেশে যেতে আগ্রহী ছিলেন। এখন রাজনীতি ও সহিংসতার ভয় তাদের ঘিরে ধরেছে।
ডেভিড লেসপারেন্স জানান, মার্কিন ধনীদের এখনকার চিন্তা হলো, ‘আমি এমএজিএ বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইনে থাকতে চাই না’। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে গেলে সহিংসতা নিয়ে চিন্তিত। আবার ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কর পরিকল্পনা নিয়েও তারা খুশি নন। তবে কর বিশ্লেষকরা বলছেন, কমলা হ্যারিসের পরিকল্পনা কংগ্রেসে পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু এটি এখনো একটি ঝুঁকি বলে ধনীদের মত।
আইনজীবীরা বলছেন, দেশ ত্যাগের ক্ষেত্রে একাধিক আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন মার্কিন ধনীরা। যেমন বিদ্যালয়ে হামলা, রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা, ইহুদি বিদ্বেষ, ইসলামফোবিয়া ও সরকারের ক্রমবর্ধমান ঋণ।
গন্তব্য হিসেবে মার্কিন নজর মূলত ইউরোপের দিকে তাকিয়ে থাকে বলে মত বিশ্লেষকদের। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স জানাচ্ছে, মার্কিনদের বসবাস বা দ্বিতীয় নাগরিকত্বের জন্য শীর্ষ দেশের মধ্যে রয়েছে পর্তুগাল, মাল্টা, গ্রিস, স্পেন ও অ্যান্টিগুয়া। ইতালিও তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আর্টন ক্যাপিটালের আরমান্ড আর্টন জানান, আমেরিকানদের ইউরোপপ্রীতি অনেক দিন ধরে চলছে। কারণ এখানে ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগে ভালো সুবিধা পাওয়া যায়।
অবশ্য অভিবাসন এখন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে বিবেচ্য হওয়ায় নিয়ম ও খরচ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ইউরোপের অনেক রাজনীতিবিদ গোল্ডেন ভিসার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। অথচ একসময় বিনিয়োগের ভিত্তিতে ধনীদের নাগরিকত্ব দেয়াকে লাভজনক ভাবত দেশগুলো। উদাহরণস্বরূপ, সম্পত্তির দাম ১৫ শতাংশ বাড়ার পর নিয়ম পরিবর্তন করেছে পর্তুগাল। এখন বিদেশীদের ন্যূনতম বিনিয়োগের সীমা বাড়িয়েছে এবং আবাসিক সম্পত্তিকে বিনিয়োগের খাত থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ইতালি এ গ্রীষ্মে বিদেশীদের কর বাড়িয়ে দিয়েছে।
এসব বিবেচনায় আমেরিকান ধনীদের দ্বিতীয় পাসপোর্ট হিসেবে আকর্ষণীয় তালিকার শীর্ষে রয়েছে মাল্টা। ১০-১২ লাখ ডলার বিনিয়োগ ব্যয়বহুল হলেও এখানকার নাগরিকত্ব মাল্টা থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবাধ ভ্রমণ ও বসবাসের সুযোগ দেয়। আমেরিকানদের কাছে ক্রমবর্ধমান হারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্যারিবীয় অঞ্চল। অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডায় ৩ লাখ ডলারের বেশি মূল্যে রিয়েল এস্টেট কিনলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। এখান থেকে সহজে যাওয়া যায় হংকং, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে।
গন্তব্য হিসেবে সেন্ট লুসিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে জানান আইনজীবীরা। এছাড়া পূর্বপুরুষের সূত্রে আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও কয়েক ডজন দেশে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়, যা বিনিয়োগ ভিসার চেয়ে অনেক সস্তা। অবসর ভিসার ক্ষেত্রে পর্তুগালের মতো কিছু দেশও সুবিধা দিচ্ছে।
![দেশ ছাড়তে চান রেকর্ডসংখ্যক ধনী আমেরিকান](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)