বাংলাদেশে সংস্কার এবং পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, ইউএসএইডের ভবিষ্যৎ কী হবে তা যতই হোক, এই সময়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বন্ধ করার কোনও সময় নয়।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে শ্রম আইন সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ড. মুহাম্মদ ইউনূস: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জেকবসন। এ সময় তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ও ইউএসএইডের বৈশ্বিক কার্যক্রম স্থগিতের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও মতবিনিময় করেন।

অধ্যাপক ইউনূস তার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা তুলে ধরে জানান, তিনি একটি সম্মত কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং এর আওতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, "একবার সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালে, রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে এবং এগুলো বাস্তবায়ন করবে।"

চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জেকবসন নির্বাচনের বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, নতুন সরকারের নির্বাচন অবশ্যই স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। তিনি সম্প্রতি নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক চালু করা অপারেশন ডেভিলস হান্ট সম্পর্কেও জানতে চান।

এদিকে, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে এবং জনগণকে প্রতিশোধের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "আমরা সবাই এই দেশের সন্তান। প্রতিশোধের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।" তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানবাধিকার রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।

অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা সম্পর্কে প্রশংসা করেন এবং বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"

এছাড়া, তিনি ইউএসএইডের স্থগিতের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বিশেষভাবে আইসিডিডিআরবি’র জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রমের ওপর এর বিরূপ প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আইসিডিডিআরবি ডায়রিয়া ও কলেরায় মৃত্যুহার প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে—বাংলাদেশসহ হাইতির মতো দেশেও।" তিনি যোগ করেন, "এই সময় ইউএসএইডের সহায়তা বন্ধ করার সময় নয়।"

এভাবে, বাংলাদেশের সংস্কার এবং পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস জোর দেন।