ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ২:৩৬:৫২ পিএম

ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের পথে ইউরোপের অর্থনীতি

২৪ মে, ২০২৪ | ৯:১৮ এএম

ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের পথে ইউরোপের অর্থনীতি

বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার ক্রমেই কমছে। ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা এতদিন শোচনীয় থাকলেও এবার তা আলোর মুখ দেখছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, ইউরোজোনের অর্থনীতি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সামান্য প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে। আগের প্রান্তিকের তুলনায় যা দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। 

 

প্রবৃদ্ধির হার কম হলেও টানা ছয় প্রান্তিকের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এছাড়া যে মূল্যস্ফীতি চলমান সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।


অন্যদিকে ইউরোপিয়ান কমিশনও ইইউর (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নিয়ে আশাবাদী। ইসির পাওলো জেন্টিলোনি বলেন, ‘‌আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করেছি। মূল্যস্ফীতির হারও কমে আসছে।’

 

পরিসংখ্যান অনুসারে, ইউরো অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধির হার স্থির ছিল। ইউরোপের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে মুদ্রানীতি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও সুদহার কমিয়েছে।

 

পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, ইউরো অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধির বার্ষিক হার ২ দশমিক ৪ শতাংশে স্থির ছিল। এটি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি।

 

প্রকৃত মূল্যস্ফীতি (অস্থিতিশীল খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বাদে) ২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগে ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমাতে গ্যাসের নিম্নমুখী দাম কিছুটা প্রভাব ফেলেছে বলে জানা গেছে। ইইউর মূল্যস্ফীতি হারে এখন ২০২২ সালের একই সময়ে তুলনায় বর্তমানে তা প্রায় এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে এ হার ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

 

অঞ্চলটিতে অন্যান্য খাতেও উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বেকারত্বের হারও কমেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ইইউর বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশে, যা এ সহস্রাব্দের সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে সামান্য বেশি ছিল।

 

ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি দ্রুত বেড়েছে। ইতালি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ফ্রান্স ও জার্মানি উভয় দেশকেই ছাড়িয়ে গেছে, যা সম্ভব হয়েছে ইইউর পুনরুদ্ধার তহবিলের কারণে।

 

কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এ তহবিল সংগ্রহ চালু রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা কমেছে। এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর গ্যাসের উচ্চ মূল্যের কারণে উত্তর ইউরোপ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

চলমান মূল্যস্ফীতির সমস্যা ধীরে ধীরে কমছে। এ অবস্থায় মুদ্রানীতি ইউরোপের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। মহাদেশটির কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে সুদহার কমিয়েছে। হাঙ্গেরি সবার আগে সুদহার বাড়ানো শুরু করেছিল। এখন তারা এ হার সাত গুণ কমিয়েছে।

 

চেক প্রজাতন্ত্রে সুদহার ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ৭ শতাংশ ছিল। সুইডেনের রিক্সব্যাংক ৮ মে প্রথমবারের মতো সুদহার কমিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরে ব্যাংকটি নীতি সুদহার আরো তিনবার কমাবে। বিপরীতে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ মাত্র একবার কমাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কাজ করেছে। ইউরোপে যথেষ্ট পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। তবে উৎপাদনশীলতা জিডিপি অনুসারে ২০২২ সালের তুলনায় কমে গেছে। তা যদি না বাড়ে তাহলে ইউরোপ আমেরিকার তুলনায় আরো পিছিয়ে পড়বে। প্রকৃতপক্ষে, আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে যে ইউরোপে জিডিপি ২০১৯ সালে আমেরিকার ৬৮ শতাংশ থেকে ২০২৯ সালে ৬৬ শতাংশে নেমে আসবে।

ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের পথে ইউরোপের অর্থনীতি