ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:৫২:০৯ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

১ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:২৫ এএম

অনলাইন সংস্করণ

নতুন এক জাতির স্বপ্ন দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা : ড. ইউনূস

১ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:২৫ এএম

নতুন এক জাতির স্বপ্ন দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা : ড. ইউনূস

ছবি: সংগ্রহ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার জীবনের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার আভাস দিয়েছেন। মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্থা এনপিআর সোমবার অধ্যাপক ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।



স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগস্টের শুরুতে ভারতে পালিয়ে যান যখন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী তার নেতৃত্ব ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষে চাকরির কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে দলে দলে তার বাসভবনে ঢুকে পড়ে। ইউনূস গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে যোগদান করার প্রেক্ষিতে প্যারিসে আবস্থানকালে প্রায় ৫ হাজার মাইল দূর থেকে এসব ঘটনা দেখছিলেন।

 

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি তখন অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশে সম্ভাব্য কারাবাসের ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন।কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েক ঘণ্টা পর ইউনূসের কাছে একটি ফোন কল আসে। তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়।

 

২০০৬ সালের নোবেল বিজয়ী, ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করার উপায় হিসাবে স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য ছোট ঋণের ব্যবস্থা চালুর পথিকৃৎ হিসাবে পরিচিত। তিনি যখন বাংলাদেশে আইনি ঝামেলায় জর্জরিত, তখন বারাক ওবামা থেকে শুরু করে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন পর্যন্ত বিশ্ব নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন।

 

গত গ্রীষ্মে যখন আমরা কথা বলেছিলাম আপনি দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন ছিলেন এবং এখন আপনি বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এসব কিছুই ঘটনার পালাবদল। নিজেকে এই অবস্থানে পেয়ে অবাক হচ্ছেন কী?

 

মুহাম্মদ ইউনূস,ঘটনার খুবই অদ্ভুত পালাবদল। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে আমি প্যারিসে ছিলাম, আমি দেখার চেষ্টা করছিলাম যে আমি ফিরে যাব কি-না, আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কারণ তিনি আমার ওপর রাগান্বিত হবেন এবং আমাকে জেলে পাঠাবেন। তাই ভাবছিলাম ফিরতে দেরি করব। আর হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে একটা ফোন পেলাম যে তিনি এখন চলে গেছেন। আমরা চাই আপনি সরকার প্রধান হন। এটি একটি বড় চমক ছিল।

 

 

ইউনূস: না, এটা কোনো রূপক নয়। মানুষ মারা যায়। প্রায় এক হাজার যুবক মারা গেল, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বুলেটে বুক পেতে দিলো। আক্ষরিক অর্থে, যুবকরা এসে আত্মাহুতি দিয়েছে। তারা যখন বিক্ষোভে যোগ দিতে তাদের বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল, তারা তাদের বাবা-মাকে বিদায় জানাচ্ছিল। তারা তাদের ভাইবোনদের বিদায় বলছে; ‘আমি হয়তো ফিরে আসব না।’ এটাই সেই চেতনা যার মধ্যে পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে। এবং অবশেষে, এটি এতটাই অবিশ্বাস্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কারণ পুরো জনতা তার বাড়ির দিকে আসছিল।

 

মার্টিন,একদিকে এসব বিক্ষোভ আন্দোলনে খুবই অজনপ্রিয় কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার প্রস্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল। সেসব বিশৃঙ্খলতার প্রথম দিনগুলোতে, আহমদিয়া ও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছিল। এসব ঘটনার কিছু অংশ ছিল শেখ হাসিনার দলের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে। এর কিছু ঘটনা কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে মনে হয়েছে। 

 

ইউনূস,জনগণ বিপ্লবের মেজাজে আছে। সুতরাং এটি একটি বিপ্লবী পরিস্থিতি। তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তাই তারা এমন লোকদের খুঁজছে যারা তাদের সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটিয়েছে। তাই জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের অনুসারীদের ওপর হামলা চালাচ্ছিল। আপনি যখন বলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে, সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় শেখ হসিনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সুতরাং আপনি পার্থক্য করতে পারবেন না যে, তারা শেখ হাসিনার অনুসারী হওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা হয়েছে নাকি তারা হিন্দু বলে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। 

 

মার্টিন, আপনি কি মনে করেন যে আপনি জনগণকে প্রতিশোধের পরিবর্তে সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করার পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন?

 

ইউনূস: প্রতিশোধের সময় মাত্র কয়েক সপ্তাহ ছিল। কিন্তু তারপর স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে শুরু করে। তাই আমরা দেশ চালাচ্ছি। কিন্তু বিক্ষোভ আছে, প্রতিশোধমূলক বিক্ষোভ নয়। বেশিরভাগ বিক্ষোভ তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে, তাদের চাকরির দাবিতে, যাদেরকে সরকার আগে বরখাস্ত করেছিল। তাই তারা বলেছিল, অতীতের সরকার আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে এবং আমরা বিনা কারণে আমাদের চাকরি হারিয়েছি। কারণ আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য। তাই বঞ্চিতরা সবাই তাদের দাবি মেটানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। দেখুন এগুলো আপনাদের ১৫ বছরের ক্ষোভ।ছনে রয়েছে। সামরিক নেতারা বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৮ মাস শাসন করতে হবে। বিরোধীদলগুলো তা চায় না। তারা নভেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। আপনার যা করতে হবে তা করার জন্য কী ১৮ মাস যথেষ্ট সময় আছে? 

 

 সংস্করণ-২ এর অর্থ ঠিক এটাই। আমরা পুরনো স্টাইলে ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত জীবন দেওয়ার মানে কী? এর কোনো মানে নেই কারণ আমরা যা করেছি, সবকিছু ধ্বংস করেছি। তাই একটি নতুন দেশ নির্মাণ আমাদের শুরু করতে হবে।

 

এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আপনি নেতিবাচক দিক দেখছেন। আমি এটাকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। আমি বলেছিলাম এই জাতি সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছে। এসব মানুষ, দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমাদের পরিবর্তন দরকার।

 

আপনি ৮৪ বছর বয়সী। আমি জানি না যে, আপনি কখনো নিজেকে সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভেবেছেন কি-না। আপনি কী মনে করেন যে, আপনি বাংলাদেশকে সেই দেশে পরিণত হতে দেখবেন যা আপনি আশা করেন, আপনার জীবদ্দশায়?

 

 সব কিছু নয়। তবে আমি খুব খুশি হব, এটি হওয়ার পথে। প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক আছে। নীতি সঠিক। তরুণেরা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তারা দেশের মধ্যে এবং বিশ্বব্যাপী ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বললে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী। তবে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি সবসময় তরুণদের গুরুত্ব দেই কারণ তারাই ভবিষ্যৎ গড়বে এবং যেভাবেই হোক তাদের নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা উচিত। কারণ তাদের উত্তরাধিকারসূত্রে এই গ্রহে থাকতে হবে। আপনি উল্লেখ করেছেন যে আমি ৮৪ বছর বয়সী। আমার সামনে দীর্ঘ সময় নেই, তাদের সামনে পুরো জীবন রয়েছে। 

নতুন এক জাতির স্বপ্ন দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা : ড. ইউনূস